বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন
ইসরায়েলি পতাকা নিয়ে মিছিল করতে করতে জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেছে শত শত উগ্র-ডানপন্থী ইহুদি জাতীয়তাবাদী। এই ঘটনা নতুন করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষ উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর আল জাজিরার।
নেসেটের একটি ছোট জাতীয়তাবাদী দলের নেতা ইতামার বেন-গভির তার কয়েক ডজন সমর্থকসহ রোববার ভোরে আল-আকসা প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেন।
রোববার সকালে আল-আকসার আল-কিবলি প্রার্থনা হলের ছাদের দখল নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের মিছিলকে বাধাহীন করতে মসজিদের ভেতরে নামাজরত মুসল্লিদের ঘিরে রাখা হয়।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের আল-আকসা মসজিদে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করার হুমকিও দেওয়া হয়।
মসজিদ প্রাঙ্গনে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সে সময় ১০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করা হয়।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, বসতি স্থাপনকারীরা ওল্ড সিটিতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ক্রুর ওপর হামলা চালায়। আল-ওয়াদের কাছাকাছি এলাকায় একজন আহত ব্যক্তিকে উদ্ধারে চেষ্টা করছিল ওই অ্যাম্বুলেন্সটি।
কিছু ইহুদি আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে নামাজরত ফিলিস্তিনিদের উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সে সময় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বরং ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতারের জন্য পায়তারা করছিল।
আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদিদের উপাসনার কোনো অনুমতি নেই এবং এটি ইসরায়েলের প্রধান রাবিনেট দ্বারাও নিষিদ্ধ। কিছু উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি তা মানতে নারাজ। এদিকে উগ্র-ডানপন্থিদের এমন কর্মকাণ্ডে আল-আকসা প্রাঙ্গনে নিজেদের অধিকার হারানোর চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা।
জেরুজালেম হলো ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের একশ বছরের সহিংসতার ইতিহাসের সাক্ষী। মুসলিম ও ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত আল-আকসা মসজিদ। দুই ধর্মাবলম্বীই আল-আকসাকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকেন।
মুসলিমদের জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান এটি। মসজিদ চত্বরটি মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবেও পরিচিত। অন্যদিকে, ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা আল-আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ আল-আকসা মসজিদ ঘিরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। ইসরায়েল এই যুদ্ধে জয়ী হয়। তারা গাজা ও সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয় যা ১৯৪৮ সাল থেকে মিশরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্যদিকে, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরও তারা দখল করে নেয় জর্ডানের কাছ থেকে।
যুদ্ধের আগ পর্যন্ত জর্ডানের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় এর তত্ত্বাবধায়ক ছিল। এরপর ইসলামি ওয়াকফ ট্রাস্টের হাতে মসজিদের ভার প্রদান করা হয়। শুধু মুসলমানরাই আল-আকসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। তবে ইহুদিরা পশ্চিম দেওয়ালে প্রার্থনার জন্য অংশ নেন।
পুরো নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলিরা ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল, জর্ডান এবং মুসলিম ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা সম্মত হওয়া এই ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করেছে এবং আগ্রাসন চালাচ্ছে। অপরদিকে, সবার জন্য এই পবিত্র স্থানটি উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছে ইসরায়েলিরা। এতেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।
সম্প্রতি জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন। এই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের শঙ্কা, ইসরায়েলি বাহিনী আগ্রাসন চালিয়ে স্থানীয় মুসলিম ও ইহুদিদের মধ্যে বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব চায়। যেটি ১৯৯০ সালে ঘটানো হয়েছিল হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদে।
কিন্তু সেটি যেন না ঘটে সেকারণে সোচ্চার ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। অন্যদিকে, ইহুদিদের ওই এলাকায় আরও ধর্মীয় কার্যক্রম জোরালোভাবে পালনের কৌশল খাটাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে দুপক্ষের এ দ্বন্দ্বে আল–আকসা মসজিদ নিয়ে সংকট নিরসনে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে জর্ডান। পবিত্র রমজান মাস শেষে এ আলোচনায় বসতে চায় তারা।