বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
আলাউদ্দিন নাসিমের বাবা একাত্তরের রাজাকার ছিল। ২০১৩ সালে তার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ঢোকানো হয়। ২০২০ সালের ২৬ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা নামধারী রাজাকার সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে দাফন করা হয়!
পজির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর ছেলে সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি ফেনীর পশুরাম উপজেলা উত্তর গুথুমা গ্রামে। ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট ফেনী মহকুমা পিস কমিটির চেয়ারম্যান প্রকাশিত ০৯ সদস্য বিশিষ্ট পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগীদের তালিকায় ০৭ নম্বর নামটি ছিলো আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের বাবা সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর। কালের বিবর্তনে ৪২ বছরের ব্যবধানে এই রাজাকার ০৮/০৪/২০১৩ ইং তারিখে সরকারের গেজেট ভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। যার গেজেট নং- ২৩৬১।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিতে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জি কে বাবুল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। এই তদন্তের নির্দেশ ধামাচাপা দেয়া হয়। যা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে, সম্প্রতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিদের নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন ফেনীর আবদুল হাই নামে এক ব্যক্তি। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, সাবেক সরকারী কর্মকর্তা নাসিম এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। যদিও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে হলফনামায় নাসিম ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু বর্তমানে ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।
স্থানীয়দের মতে এমপি ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ। এ ছাড়াও কানাডায় রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। মেয়ে রাকা চৌধুরী এখনও কানাডায় অবস্থান করছেন। এমপি হওয়ার আগেও তিনি পরিবার নিয়ে প্রায়ই কানাডায় থাকতেন।
স্থানীয়দের প্রশ্ন-একজন সাবেক আমলা এত অর্থ-সম্পদ ও ব্যবসার মালিক হন কীভাবে? এসব অর্থ-সম্পদ অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগ তাদের অনেকের। অন্যদিকে প্রভাবশালী এই এমপির কারণে দলের অনেক প্রবীণ নেতাকর্মীও কোণঠাসা হয়ে আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফেনী আওয়ামী লীগেও রয়েছে চরম অসন্তোষ।
সম্প্রতি জমা দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু নির্বাচনের হলফনামায় ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে স্বীকার করলেও বাস্তবে তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। নামে-বেনামে তাদের রয়েছে শত শত বিঘা জমি। ঢাকায় রয়েছে অসংখ্য ফ্লাট ও বিলাসবহুল গাড়ি। একজন সরকারি কর্মকর্তা থেকে বনে গেছেন বিলিয়নিয়ার।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন সন্দেহভাজনদের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশের পরে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদের চাকরি তিনি ছেড়ে দেন। তালিকা প্রকাশের পর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। তারপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রভাব বিস্তার করে সেই মামলা থেকে অব্যাহতি নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন দফতরে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২০ পার্সেন্ট কমিশন নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের কৃষিজমি জিম্মি করে কাউকে দিয়েছেন স্বল্পমূল্য আবার কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে সেই জমি তিনি দখল করে নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০ বিঘার ওপরে গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর রয়েছে ৪টি।
আবদুল হাই নামে ওই ব্যক্তির অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বিরুদ্ধে রয়েছে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ। চট্টগ্রাম বিভাগের যেখানেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের কমিটি করা হয়, সেখানেই তিনি হস্তক্ষেপ করেন। নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে পদে বসাতে শুরু করেন তার নানা অপপ্রচার। তাকে মাসোয়ারা না দিলে কাউকে তিনি শান্তিতে রাজনীতি করতে দেন না। নাসিমের শ্বশুর আবু তাহের চৌধুরীর বিরুদ্ধেও রয়েছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
নাসিমের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করে তাকে আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আবদুল হাই।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে মামলা করা হবে।
দুদকের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে বিপুলসংখ্যক অভিযোগ জমা পড়ছে। সব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের কাজ চলছে। ফেনী-১ আসনের এমপির বিরুদ্ধে করা অভিযোগটিরও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।