Dhaka 5:23 pm, Wednesday, 26 November 2025

জুলাই বিপ্লব বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে : প্রধান উপদেষ্টা

Reporter Name
  • Update Time : 12:33:08 pm, Saturday, 1 February 2025
  • / 140 Time View

অগ্নিশিখা প্রতিবেদকঃ বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই বিপ্লব এবারের বইমেলা নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে বসা থাকা স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, আমি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জুলাইয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসী ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

ড. ইউনূস বলেন, বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরো অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের পরিপ্রেক্ষিত আমাদেরকে নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে।

বরকত, সালাম, রফিক, জাব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহা বিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রোথিত করে দিয়ে গেল। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী- দীর্ঘস্থায়ী সব দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এজন্য সব ধরনের জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। সেখানে আমরা শান্তি পাই। স্বস্তি পাই। সমাধান পাই। সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পায়। ২১ আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়। মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে এক ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এক দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার উদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।

তিনি বলেন, একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে। প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে শুধু তাই নয়, এই-টান গভীরতর হয়েছে। আমাদেরকে দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে তাদের স্বপ্নগুলো, তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো, তাদের দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় এঁকে দিয়েছে। আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এগুলোর স্থান এখন একন আমাদের বুকের মধ্যে, জাদুঘরে হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের আকা ছবিগুলো যারা মেলায় স্থান করে দিয়েছে। সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে। বইমেলার একাংশে এই তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের আঁকা ছবিগুলোর প্রদর্শনী করা গেলে বইমেলায় আসা ক্রেতারা, দর্শকরা উপকৃত হত।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

10

জুলাই বিপ্লব বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে : প্রধান উপদেষ্টা

Update Time : 12:33:08 pm, Saturday, 1 February 2025

অগ্নিশিখা প্রতিবেদকঃ বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই বিপ্লব এবারের বইমেলা নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে বসা থাকা স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, আমি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জুলাইয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসী ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছেন তাদের সবাইকে। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

ড. ইউনূস বলেন, বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরো অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের পরিপ্রেক্ষিত আমাদেরকে নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে।

বরকত, সালাম, রফিক, জাব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহা বিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রোথিত করে দিয়ে গেল। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী- দীর্ঘস্থায়ী সব দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এজন্য সব ধরনের জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই। সেখানে আমরা শান্তি পাই। স্বস্তি পাই। সমাধান পাই। সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পায়। ২১ আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়। মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে এক ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এক দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার উদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।

তিনি বলেন, একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে। প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে শুধু তাই নয়, এই-টান গভীরতর হয়েছে। আমাদেরকে দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে তাদের স্বপ্নগুলো, তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো, তাদের দাবিগুলো অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় এঁকে দিয়েছে। আমাদের রাস্তার দেয়াল এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এগুলোর স্থান এখন একন আমাদের বুকের মধ্যে, জাদুঘরে হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের আকা ছবিগুলো যারা মেলায় স্থান করে দিয়েছে। সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে। বইমেলার একাংশে এই তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের আঁকা ছবিগুলোর প্রদর্শনী করা গেলে বইমেলায় আসা ক্রেতারা, দর্শকরা উপকৃত হত।