ক্রীড়া ডেস্ক: বাংলাদেশের পেস আক্রমণ কি তাদের ইতিহাসের সেরা? দুবাইয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগের দিন এক ভারতীয় সাংবাদিকের করা এই প্রশ্নই বলে দিচ্ছে, ম্যাচটি কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে। নাহিদ রানার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের শক্তিশালী পেস আক্রমণ কি ভারতের দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দিতে পারবে?
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপটা রেলের মালবাহী ওয়াগনের মতোই লম্বা। একের পর এক ব্যাটসম্যান আসছেন তো আসছেন! বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা তো সর্বকালের সেরাদের কাতারেই থাকবেন, এই মুহূর্তে ওয়ানডে ক্রিকেটে তাদের চেয়ে বেশি রান অন্য কোনো ব্যাটসম্যানের নেই। শুবমান গিল, শ্রেয়াস আইয়াররা প্রজন্মে নবীন হলেও প্রহারে পূর্বসূরিদের চেয়েও নির্মম। অলরাউন্ডার হিসেবে যারা দলে আছেন, সেই হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল আর ওয়াশিংটন সুন্দরও ব্যাট হাতে কম যান না। আর বাংলাদেশের তো কুখ্যাতিই আছে লোয়ার অর্ডারকে রান করতে দেওয়ার। দুবাইয়ের উষর মরুর বুকেও রানের বাম্পার ফলন ঘটাবার জন্য যা দরকার তার সবই আছে ভারতের ভাঁড়ারে। ব্যাটিংয়ের এই দুর্গম দূর্গ ভাঙতে যে আগুনে গোলা দরকার সেসব কি আছে বাংলাদেশের অধিনায়কের হাতে? নাজমুল হোসেন শান্ত মনে করছেন, বারুদ একেবারে কম নেই তার হাতেও, ‘(এটাই বাংলাদেশের কি সর্বকালের সেরা পেস আক্রমণ?) হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার মনে হয় আমরা আমাদের সিম আক্রমণ নিয়ে সবসময়ই ভুগেছি। তবে গত কয়েক বছরে আমরা বেশ কয়েকজন মানসম্মত ফাস্ট বোলার খুঁজে পেয়েছি। আমাদের হাতে এখন কয়েকজন বেশ জোরাল গতির বোলার আছে; নাহিদ রানা আছে, তাসকিন নিয়মিত বল করছে, আমার মনে হয় এটা দলকে খুব ভালো একটা সহায়তা দেয়। অধিনায়ক হিসেবে আমি তো দেখতেই চাই তারা জোরে বল করছে আর দলের জন্য বল করছে। আমি খুবই খুশি যে আমাদের হাতে বেশ কয়েকজন ভালো পেস বোলার আছে, আর রাতের খেলায় ফ্লাডলাইটের আলোয় বল বেশ সুইংও করতে পারে। তারা যদি সঠিক জায়গায় বল করে তাহলে দলের জন্য ভালো হবে।’
নাহিদ রানাকে ঘিরেও কমতি নেই কৌতূহলের। খেলেছেন মাত্র ছয় টেস্ট আর তিন ওয়ানডে। সাদা বলে শিকার মাত্র ৪ উইকেট, তবুও তাকে ঘিরেই যত আগ্রহ। বছর দশেক আগে ‘অচেনা তরুণ’ মোস্তাফিজুর রহমান কী করেছিল ভারতের বিপক্ষে, সেই আতঙ্ক বুঝি কাটেনি এখনো। নাহিদ রানাকে কীভাবে ভারতের বিপক্ষে ব্যবহার করতে চাইবেন, এমন শিশুতোষ প্রশ্নও করেছেন একজন। শান্তর উত্তর ছিল, ‘সম্প্রতি সে ভারতের বিপক্ষে একটা টেস্ট খেলেছে, তাই তার কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে। তবে কালকে (আজ) তাকে ভালো জায়গায় বল করতেই হবে। তাকে আমি যতটা দেখেছি, সে প্রতিপক্ষের দিকে খুব একটা তাকায় না। সে শুধু তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকেই খেয়াল রাখে। আমি আশা করছি সে যদি কালকে খেলে তাহলে সে তার পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করবে আর দলের জন্য ভালো করবে।’ নাহিদ রানার প্রতি এই বাড়তি নজরটা ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন দলনেতা, তবে তার বিশ্বাস এতে পারফরম্যান্সে হেরফের হবে না বাংলাদেশের পেসারের, ‘রানাকে ঘিরে অবশ্যই বাড়তি একটা মনোযোগ থাকবে, তবে সে কখনোই মনে করে না যে সে এত বড় একটা টুর্নামেন্টে খেলতে এসে চাপের মুখে আছে। সেই সবসময়ই স্বাভাবিক আছে, ভালোভাবেই অনুশীলন করছে। অবশ্যই কালকে (আজ) তার খেলার সুযোগ আছে, আশা করি সে তার সেরাটা দেবে মাঠে।’ নাহিদ রানার ওয়ার্ক-লোড নিয়েও চিন্তিত নন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘রানা ভালো আছে, সে বিপিএলে অনেক ম্যাচ খেলেছে তবে সে ভালো আছে। ফিজিও আর ট্রেনার তার ওয়ার্ক-লোড ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন। আমার ধারণা সে একদমই সতেজ আছে, আর খেলার জন্য তৈরি, কাল (আজ) তার একাদশে থাকার ভালো সম্ভাবনা আছে।’
কোনো আইসিসি আসরে বাংলাদেশ একবারই হারিয়েছে ভারতকে, ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচের শুরুতেই ২ উইকেটসহ ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের ব্যাটিংটাকে গর্জে উঠতে দেননি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। মিরপুরে ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন অচেনা মোস্তাফিজই, চেন্নাই টেস্টেও শুরুতে ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশের পেস বোলিং একাধিকবার ভুগিয়েছে ভারতকে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বোধহয় নাহিদ রানাকে ঘিরেই বাড়তি কৌতূহল, ভারতীয় গণমাধ্যমে।