বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান বলেছেন, দাদু (বেগম খালেদা জিয়া) আমাদের পরিবারকে আগলে রাখা একজন মমতাময়ী অভিভাবক।

আজ মঙ্গলবার সকালে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।

ফেসবুক পোস্টে জাইমা রহমান বলেন, ‘দাদুকে নিয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর একটি হলো, পরিবারকে আগলে রাখা একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি কতটা মমতাময়ী ছিলেন! আমার বয়স তখন এগারো। আমাদের স্কুলের ফুটবল টিম একটা টুর্নামেন্ট জিতেছিল, আর আমি মেডেল পেয়েছিলাম। আম্মু আমাকে সরাসরি দাদু’র অফিসে নিয়ে যান, যেন আমি নিজেই দাদুকে আমার বিজয়ের গল্পটা বলতে পারি; তাকে মেডেলটা দেখতে পারি। আমি খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে গোলকিপার হিসেবে কী-কী করেছি, সেটা বলছিলাম; আর স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম, দাদু প্রচণ্ড মনোযোগ নিয়ে আমাকে শুনছেন। তিনি এতটাই গর্বিত হয়েছিলেন যে, পরে সেই গল্পটা তিনি অন্যদের কাছেও বলতেন।’

জাইমা রহমান বলেন, ‘আমি সব সময়ই জানতাম, দাদু’র কাঁধে একটা দেশের দায়িত্ব। তবুও আমার স্মৃতিতে দাদু হলেন পরিবারকে আগলে রাখা একজন মমতাময়ী অভিভাবক। লাখো মানুষের কাছে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও আমার আর আমার কাজিনদের কাছে তিনি শুধুই ‘দাদু’। আমাদের ‘দাদু’।

তিনি জানান, তার দাদু বেগম খালেদা জিয়া সব সময় তাদের খোঁজখবর রাখতেন, সময় দিতেন এবং তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে সাহস দিতেন ও উজ্জীবিত করতেন।

জাইমা রহমান আরও জানান, এই ছোট ছোট মুহূর্ত থেকেই তিনি নেতৃত্বের প্রথম শিক্ষা পেয়েছেন। সেই শিক্ষা হলো— নম্রতা, আন্তরিকতা আর মন দিয়ে শোনার মানসিকতা।

লন্ডনে কাটানো জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাইরে কাটানো সতেরোটা বছর আমার জীবন অনেকভাবে বদলে দিয়েছে। কিন্তু আমি কখনোই আমার শিকড় ভুলে যাইনি। কারণ, আমাদের সত্তার যে ভিত্তি, আমাদের যে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ; সেটিই আমাদেরকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, পরিচয় বহন করে।’

জাইমা জানান, প্রবাসে থাকা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের অনেক বাংলাদেশির মতো তিনিও দেশের বাইরে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। লন্ডনের জীবন তাকে বাস্তববাদী করেছে এবং একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। তবে তার হৃদয় ও মন সব সময় বাংলাদেশেই ছিল।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাকে শৃঙ্খলা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান দিলেও আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে মানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে এবং বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে শিখিয়েছে বলে জানান জাইমা রহমান।

প্রতিটি ক্লায়েন্ট, প্রতিটি মামলা এবং প্রতিটি সমস্যাই কারও না কারও জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করেন জাইমা রহমান। যারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত বা অবহেলার শিকার হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব একজন আইনজীবীর বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন ‘কারও জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনে তার পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা যে শিক্ষাটা দেয়, সেটা কোনো ক্লাসরুম দিতে পারে না। এই প্রতিটা ধাপ আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে, মানুষ হিসেবে কেমন হতে চাই।’

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে জাইমা রহমান বলেন, তিনি তার দাদাকে কখনো দেখেননি। তবে তার সততা ও দেশপ্রেমের কথা তিনি সব সময় শুনে এসেছেন। দাদু ও আব্বু সেই আদর্শই বহন করে চলেছেন।

তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় এবং ৫ আগস্টের আগে-পরের সময়টাতে আমি যতটুকু পেরেছি, নেপথ্যে থেকে সাধ্যমতো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। অধিকাংশ সময় বলেছি কম, বরং শুনেছি বেশি। ছোট-ছোট কাজের মাধ্যমে তাদের বোঝা একটু হালকা করার চেষ্টা করেছি।’

দেশে ফেরার বিষয়ে জাইমা রহমান জানান, বহু বছর পর তিনি দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরা মানে তার কাছে আবেগ আর অনুভূতির এক অনন্য সংমিশ্রণ।

জাইমা বলেন, ‘দেশে ফিরে ইনশাআল্লাহ, আমি ‘দাদু’র পাশে থাকতে চাই। এই সময়টাতে আব্বুকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে চাই। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য সর্বস্ব দিয়ে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চাই। নিজের চোখে, নিজের অভিজ্ঞতায় প্রিয় বাংলাদেশকে নতুন করে জানতে চাই; মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চাই। যেভাবে আগানো দরকার, আমি চাই বাংলাদেশ আবারও সেভাবে সামনে এগিয়ে যাক, গর্জে উঠুক।’

তিনি জানান, তার পরিবারকে ঘিরে দেশের জনগণের কৌতূহল ও প্রত্যাশা রয়েছে। কখনো তা আশার, কখনো প্রশ্নের। পরিবার, বন্ধুত্ব এবং সমাজে সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়ভারও অনুভব করেন তারা।

পোস্টের শেষাংশে জাইমা রহমান বলেন, ‘সংক্ষেপে, আমার নিজের ভাষায়, এই হলো আমার গল্প। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটা নিজস্ব গল্প আছে। এই গল্পগুলোকে ধারণ করে, আমরা সবাই হয়তো একসঙ্গে বাকি পথটা হাঁটতে পারি।’

facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
whatsapp sharing button