Dhaka 7:38 pm, Sunday, 23 November 2025

দোহার-নবাবগঞ্জ তাঁত শিল্প এখন শুধুই কালের স্বাক্ষী নতুন প্রজম্ম আগ্রহী নয় এ পেশায়

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:30:35 am, Thursday, 13 February 2025
  • 133 Time View

আমিনুর রহমান,নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ এক সময়ের কোলাহল পূর্ণ তাঁত পল্লী এখন সুনশান নিরবতায়। রাজধানী ঢাকার পাশেই দোহার-নবাবগঞ্জ তাঁত পল্লী এখন শুধুই কালের সাক্ষী। সারিবদ্ধ ছোট টিন সেডের ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। নতুন প্রম্মের কেউও এখন আর এ পেশায় থাকতে আগ্রহী নয়। প্রায় ২০ হাজার তাঁতী তাঁদের বাপ দাদার আমলের এ পেশা বদলে ফেলেছেন বলে দাবি স্থানয়ীদের।

সরেজমিনে রবিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, দোহার-নবাবগঞ্জ প্রাণকেন্দ্র রাইপাড়া, চর জয়পাড়া চিতাঘাটা ও চর লটাখোলায়, আগলা, গালিমপুর, বক্সনগর, যন্ত্রাইল, তাঁতীরা তাদের হাতে বুনা তাঁতের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এক যুগ আগে এখানে হাজারের উপর হাতে তৈরী লু্িঙ্গর তাঁত ছিলো। সেখানে এখন ২০/২৫টিও নেই। যে ঘরগুলোতে তাঁতীরা হাতে বুনা তাঁতের লুঙ্গি তৈরী করতো সেই ঘরগুলো জরাজীর্ণ অবস্থা পড়ে আছে।লটাখোলা বিলের পাড়ের মো. জাহাঙ্গীরের বাসায় খট খট শব্দ পাওয়া গেল।তিনি ৩টি তাঁত চালাতেন। এখন একটি চলছে। তাও নেই কোনো কারিগর। একাই কাজ করছেন। তিনি বলেন, এই গ্রামে এখন আর কেউ হাতের তাঁত চালায় না। ক্ষতি পোষানো খুব কষ্ট হয়।

রাইপাড়া তাঁত পল্লীর লিপি আক্তার বলেন, এখন আর কাজ নেই। এক সময় ভোর হতেই খট খট শব্দে মুখরিত হতো তাঁতীপাড়া। এছাড়া আমাগো পোলাপানেও এ কাজ করতে চায় না। তাই কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ রিকসা চালায়, কেউ মাছ ধরে। এ পেশা বিলুপ্তির পথে।

তাঁতী রেজাউল করিম বলেন, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা জিম্মি। কম টাকায় কিনে ওরাই বেশী লাভ করে। এ কাজে অনেক পরিশ্রম আছে বলে জানান এ তাঁতী।

জানা গেছে, এ কাজে পরিবারের সবাইকে শ্রম দিতে হয়। তাঁতী বাড়ির বউ ঝিয়েরাও ভোর হতে রাত পর্যন্ত কাজ করেন। প্রথমে সুতোয় গুটি তৈরী করতে হয়। এরপর তানা কাড়াতে হয়। তানা ভাঙ্গার পর হানায় ‘ব’ ভরতে হয়। এরপর তাঁতে দিলে লুঙ্গি বুনানো হয়। এতো গুলো ধাপ পেরিয়ে কষ্ট করে ব্যবসা মিলে না। এছাড়া দিনের পর দিন রং ও সুতার দাম বাড়ায় আরো আগ্রহ হারাচ্ছেন দোহার-নবাবগঞ্জ প্রসিদ্ধ এ তাঁত পল্লীর বাসিন্দারা।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম বলেন, দোহার-নবাবগঞ্জে একসময় তাতঁ শিল্পের জনপ্রিয়তা থাকলেও বর্তমানে কালের বিবতনে এই শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে আধুনিক মেশিন দিয়ে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে লুঙ্গী প্রস্তুর করার কারণে তাঁত শিল্পের ব্যবসা বিলুপ্ত প্রায়। তাতঁ শিল্পকে বাচিঁয়ে রাখতে হলে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে তাদের কে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে হারিয়ে যাওয়া তাতঁ শিল্পকে পূর্ণরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Murad Ahmed

Popular Post

ফতুল্লা থানা পুলিশ ০৯ (নয়) বোতল ফেন্সিডিল সহ ০২ (দুই) জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে

দোহার-নবাবগঞ্জ তাঁত শিল্প এখন শুধুই কালের স্বাক্ষী নতুন প্রজম্ম আগ্রহী নয় এ পেশায়

Update Time : 08:30:35 am, Thursday, 13 February 2025

আমিনুর রহমান,নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ এক সময়ের কোলাহল পূর্ণ তাঁত পল্লী এখন সুনশান নিরবতায়। রাজধানী ঢাকার পাশেই দোহার-নবাবগঞ্জ তাঁত পল্লী এখন শুধুই কালের সাক্ষী। সারিবদ্ধ ছোট টিন সেডের ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। নতুন প্রম্মের কেউও এখন আর এ পেশায় থাকতে আগ্রহী নয়। প্রায় ২০ হাজার তাঁতী তাঁদের বাপ দাদার আমলের এ পেশা বদলে ফেলেছেন বলে দাবি স্থানয়ীদের।

সরেজমিনে রবিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, দোহার-নবাবগঞ্জ প্রাণকেন্দ্র রাইপাড়া, চর জয়পাড়া চিতাঘাটা ও চর লটাখোলায়, আগলা, গালিমপুর, বক্সনগর, যন্ত্রাইল, তাঁতীরা তাদের হাতে বুনা তাঁতের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এক যুগ আগে এখানে হাজারের উপর হাতে তৈরী লু্িঙ্গর তাঁত ছিলো। সেখানে এখন ২০/২৫টিও নেই। যে ঘরগুলোতে তাঁতীরা হাতে বুনা তাঁতের লুঙ্গি তৈরী করতো সেই ঘরগুলো জরাজীর্ণ অবস্থা পড়ে আছে।লটাখোলা বিলের পাড়ের মো. জাহাঙ্গীরের বাসায় খট খট শব্দ পাওয়া গেল।তিনি ৩টি তাঁত চালাতেন। এখন একটি চলছে। তাও নেই কোনো কারিগর। একাই কাজ করছেন। তিনি বলেন, এই গ্রামে এখন আর কেউ হাতের তাঁত চালায় না। ক্ষতি পোষানো খুব কষ্ট হয়।

রাইপাড়া তাঁত পল্লীর লিপি আক্তার বলেন, এখন আর কাজ নেই। এক সময় ভোর হতেই খট খট শব্দে মুখরিত হতো তাঁতীপাড়া। এছাড়া আমাগো পোলাপানেও এ কাজ করতে চায় না। তাই কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ রিকসা চালায়, কেউ মাছ ধরে। এ পেশা বিলুপ্তির পথে।

তাঁতী রেজাউল করিম বলেন, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা জিম্মি। কম টাকায় কিনে ওরাই বেশী লাভ করে। এ কাজে অনেক পরিশ্রম আছে বলে জানান এ তাঁতী।

জানা গেছে, এ কাজে পরিবারের সবাইকে শ্রম দিতে হয়। তাঁতী বাড়ির বউ ঝিয়েরাও ভোর হতে রাত পর্যন্ত কাজ করেন। প্রথমে সুতোয় গুটি তৈরী করতে হয়। এরপর তানা কাড়াতে হয়। তানা ভাঙ্গার পর হানায় ‘ব’ ভরতে হয়। এরপর তাঁতে দিলে লুঙ্গি বুনানো হয়। এতো গুলো ধাপ পেরিয়ে কষ্ট করে ব্যবসা মিলে না। এছাড়া দিনের পর দিন রং ও সুতার দাম বাড়ায় আরো আগ্রহ হারাচ্ছেন দোহার-নবাবগঞ্জ প্রসিদ্ধ এ তাঁত পল্লীর বাসিন্দারা।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম বলেন, দোহার-নবাবগঞ্জে একসময় তাতঁ শিল্পের জনপ্রিয়তা থাকলেও বর্তমানে কালের বিবতনে এই শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে আধুনিক মেশিন দিয়ে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে লুঙ্গী প্রস্তুর করার কারণে তাঁত শিল্পের ব্যবসা বিলুপ্ত প্রায়। তাতঁ শিল্পকে বাচিঁয়ে রাখতে হলে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে তাদের কে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে হারিয়ে যাওয়া তাতঁ শিল্পকে পূর্ণরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।