Dhaka 4:47 pm, Thursday, 25 December 2025

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে মায়ের কাছে ফিরলেন তারেক রহমান

অগ্নিশিখা অনলাইন
  • Update Time : 01:31:07 pm, Thursday, 25 December 2025
  • / 24 Time View
৩৩
ত্যাগ ও সংগ্রামের দীর্ঘ দেড় যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মায়ের কাছে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ( বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরে তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলিঙ্গন ও কুশল বিনিময় করেন।

এছাড়া বিমানবন্দরে ফুলের মালা দিয়ে তারেক রহমানকে বরণ করে নেন তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু।

এর আগে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় তিনি স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে রওনা হন।

আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সিলেটে প্রায় এক ঘণ্টার গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ডের পর তারেক রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

বিমানবন্দর থেকে লালসবুজ রঙে সাজানো বাসে করে রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারেক রহমান।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁর গুরুতর অসুস্থ মমতাময়ী মা, বাংলাদেশের অভিভাবক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া। তবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে, যাত্রাপথের মাঝামাঝি রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় দলের পক্ষ থেকে তৈরি করা সংক্ষিপ্ত গণঅভ্যর্থনা মঞ্চে তিনি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। সেখান থেকে হাসপাতালে গিয়ে মায়ের পাশে একান্ত কিছু সময় কাটাবেন । এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন তারেক রহমান।

আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা জিয়াউর রহমানের মাজার ও সাভার স্মৃতিসৌধে যাবেন তারেক রহমান। শনিবার নির্বাচন কমিশনে এনআইডি কার্যক্রম শেষ করে শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তিনি। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন।

দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং সর্বজনীন প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার মেলবন্ধন, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের সম্ভাবনা।

ইতিহাস বলে, রাজনীতিতে সময় সবকিছুর উত্তর দিয়ে দেয়। তারেক রহমানের বেলায় এই কথাটি যেন সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। একদিন তিনি পাহাড়সম অভিযোগ মাথায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে এবং দীর্ঘদিন নির্বাসনে ছিলেন। আজ দেড় যুগ পর তিনি দেশের মাটিতে ফিরে আসছেন আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে, গণমানুষের নেতা আর জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে।

তারেক রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পথ পরিক্রমা মসৃণ ছিল না। ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে বিতর্কের পাহাড় তৈরি করা হয়েছিল। মাথার উপরে ঝুলতে থাকে অসংখ্য মামলা। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকার এবং সুশীল সমাজের একটি প্রভাবশালী অংশ তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে থাকে।

অভিযোগ ছিল, তারেক রহমানের রাজনৈতিক কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবন ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র বা ‘প্যারালাল গভর্নমেন্ট’। তবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর এবং স্পর্শকাতর অভিযোগটি আনা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে কেন্দ্র করে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় এবং পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূরক চার্জশিটের মাধ্যমে মুফতি হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে তাকে এই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

আলোচিত ১/১১ সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। রিমান্ডে থাকাকালীন তার ওপর চালানো হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এতে তিনি গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন। ১৮ মাস কারাভোগের পর তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর কেটেছে ১৭ বছরেরও বেশি সময়। ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি দেশের মাটি।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে। তারা গণতন্ত্রের পথকে অবরুদ্ধ করার জন্য ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দেয়। বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। একটি জবরদস্তিমূলক শাসনব্যাবস্থা কায়েম করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতির মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হয় এবং তাকে কারাবরণ করতে হয়। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে দলের হাল ধরেন তারেক রহমান। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান। এরপর থেকেই তিনি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেমে পড়েন। গুম, খুন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে নির্বাসনের সময় ব্যক্তিগত জীবনেও তারেক রহমানের ওপর নেমে আসে কঠিন দুঃসময়। ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বহুবার কারাবাস, অসুস্থতা ও চিকিৎসা সংকটের মুখোমুখি হন। এমন বাস্তবতায় দূরবর্তী অবস্থান থেকেও তারেক রহমান দলকে ধরে রাখার কাজে স্থিরভাবে মনোনিবেশ করেন।

তারেক রহমান জানতেন, ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী তাকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে চায়। ফলে তিনি নিজেকে সামনে এনে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক আন্দোলনের পরিবর্তে জনগণ-কেন্দ্রিক একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি সুস্পষ্ট করে দেনম ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’, যা দলীয় নেতাদের মতে তার ধৈর্য ও স্থিতধী নেতৃত্বের প্রমাণ।

দীর্ঘ সময় সুদূর যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্ত, কৌশলগত পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক নির্দেশনায় এখন তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় চালিকাশক্তি। দলটির শীর্ষস্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তারেক রহমান। তার রাজনৈতিক চরিত্রের মধ্যে দলের কর্মী-সমর্থকেরা খুঁজে পাচ্ছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। নেতাকর্মীরা বলছেন, একজন নেতার নেতৃত্বের মূল শক্তি থাকে তার ন্যায়বোধ আর মানসিতায়। তার আদর্শের মহিমায়।

তারেক রহমান তেমনই একজন নেতা, যিনি দূর থেকেও ছিলেন সবচেয়ে কাছে।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিছক ব্যক্তিগত বা দলীয় কোনো বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক আবেগঘন ও গভীর অর্থবহ অধ্যায়। তার এই প্রত্যাবর্তনে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দীর্ঘ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর দলকে নতুন করে সংগঠিত করবে। পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হবে নতুন বাস্তবতা। তার নেতৃত্বে দেশে ফিরবে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে মায়ের কাছে ফিরলেন তারেক রহমান

Update Time : 01:31:07 pm, Thursday, 25 December 2025
৩৩
ত্যাগ ও সংগ্রামের দীর্ঘ দেড় যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মায়ের কাছে ফিরলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ( বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরে তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলিঙ্গন ও কুশল বিনিময় করেন।

এছাড়া বিমানবন্দরে ফুলের মালা দিয়ে তারেক রহমানকে বরণ করে নেন তার শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু।

এর আগে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় তিনি স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে রওনা হন।

আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সিলেটে প্রায় এক ঘণ্টার গ্রাউন্ড টার্নঅ্যারাউন্ডের পর তারেক রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

বিমানবন্দর থেকে লালসবুজ রঙে সাজানো বাসে করে রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারেক রহমান।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারেক রহমানের প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হলো সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁর গুরুতর অসুস্থ মমতাময়ী মা, বাংলাদেশের অভিভাবক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া। তবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান জানিয়ে, যাত্রাপথের মাঝামাঝি রাজধানীর ‘জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় দলের পক্ষ থেকে তৈরি করা সংক্ষিপ্ত গণঅভ্যর্থনা মঞ্চে তিনি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন। সেখান থেকে হাসপাতালে গিয়ে মায়ের পাশে একান্ত কিছু সময় কাটাবেন । এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন তারেক রহমান।

আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা জিয়াউর রহমানের মাজার ও সাভার স্মৃতিসৌধে যাবেন তারেক রহমান। শনিবার নির্বাচন কমিশনে এনআইডি কার্যক্রম শেষ করে শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তিনি। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন।

দীর্ঘ দেড় যুগ পর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে। এই প্রত্যাবর্তন শুধু একজন নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং সর্বজনীন প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষার মেলবন্ধন, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের সম্ভাবনা।

ইতিহাস বলে, রাজনীতিতে সময় সবকিছুর উত্তর দিয়ে দেয়। তারেক রহমানের বেলায় এই কথাটি যেন সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে। একদিন তিনি পাহাড়সম অভিযোগ মাথায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে এবং দীর্ঘদিন নির্বাসনে ছিলেন। আজ দেড় যুগ পর তিনি দেশের মাটিতে ফিরে আসছেন আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে, গণমানুষের নেতা আর জাতির ঐক্যের প্রতীক হয়ে।

তারেক রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পথ পরিক্রমা মসৃণ ছিল না। ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে বিতর্কের পাহাড় তৈরি করা হয়েছিল। মাথার উপরে ঝুলতে থাকে অসংখ্য মামলা। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকার এবং সুশীল সমাজের একটি প্রভাবশালী অংশ তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে থাকে।

অভিযোগ ছিল, তারেক রহমানের রাজনৈতিক কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবন ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র বা ‘প্যারালাল গভর্নমেন্ট’। তবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর এবং স্পর্শকাতর অভিযোগটি আনা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে কেন্দ্র করে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় এবং পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূরক চার্জশিটের মাধ্যমে মুফতি হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে তাকে এই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

আলোচিত ১/১১ সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। রিমান্ডে থাকাকালীন তার ওপর চালানো হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এতে তিনি গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন। ১৮ মাস কারাভোগের পর তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর কেটেছে ১৭ বছরেরও বেশি সময়। ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি দেশের মাটি।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে। তারা গণতন্ত্রের পথকে অবরুদ্ধ করার জন্য ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দেয়। বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। একটি জবরদস্তিমূলক শাসনব্যাবস্থা কায়েম করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতির মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হয় এবং তাকে কারাবরণ করতে হয়। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে দলের হাল ধরেন তারেক রহমান। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান। এরপর থেকেই তিনি দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেমে পড়েন। গুম, খুন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে নির্বাসনের সময় ব্যক্তিগত জীবনেও তারেক রহমানের ওপর নেমে আসে কঠিন দুঃসময়। ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। একইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বহুবার কারাবাস, অসুস্থতা ও চিকিৎসা সংকটের মুখোমুখি হন। এমন বাস্তবতায় দূরবর্তী অবস্থান থেকেও তারেক রহমান দলকে ধরে রাখার কাজে স্থিরভাবে মনোনিবেশ করেন।

তারেক রহমান জানতেন, ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠী তাকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে চায়। ফলে তিনি নিজেকে সামনে এনে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক আন্দোলনের পরিবর্তে জনগণ-কেন্দ্রিক একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি সুস্পষ্ট করে দেনম ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’, যা দলীয় নেতাদের মতে তার ধৈর্য ও স্থিতধী নেতৃত্বের প্রমাণ।

দীর্ঘ সময় সুদূর যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্ত, কৌশলগত পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক নির্দেশনায় এখন তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় চালিকাশক্তি। দলটির শীর্ষস্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তারেক রহমান। তার রাজনৈতিক চরিত্রের মধ্যে দলের কর্মী-সমর্থকেরা খুঁজে পাচ্ছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। নেতাকর্মীরা বলছেন, একজন নেতার নেতৃত্বের মূল শক্তি থাকে তার ন্যায়বোধ আর মানসিতায়। তার আদর্শের মহিমায়।

তারেক রহমান তেমনই একজন নেতা, যিনি দূর থেকেও ছিলেন সবচেয়ে কাছে।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিছক ব্যক্তিগত বা দলীয় কোনো বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক আবেগঘন ও গভীর অর্থবহ অধ্যায়। তার এই প্রত্যাবর্তনে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাদের বিশ্বাস, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দীর্ঘ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পর দলকে নতুন করে সংগঠিত করবে। পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হবে নতুন বাস্তবতা। তার নেতৃত্বে দেশে ফিরবে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।