Dhaka 5:17 pm, Wednesday, 31 December 2025

১ মে থেকে ডিম-মুরগির খামার বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার

Reporter Name
  • Update Time : 06:30:28 am, Tuesday, 22 April 2025
  • / 177 Time View
৮৯

অগ্নিশিখা প্রতিবেদক: আগামী ১ মে থেকে সারা দেশে ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী খামার বন্ধ রাখার ঘোষণা প্রত্যাহার করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

সোমবার (২১ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার জানিয়েছেন, সরকারের আশ্বাসে ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস এবং আন্তরিক আগ্রহের প্রকাশ পাওয়ায় খামারিরা আপাতত কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন না। গতকাল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রান্তিক খামারিদের উত্থাপিত ১০ দফা দাবির প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখিয়েছে। অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বেশ কিছু যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার কারণ ব্যাখ্যা করে সুমন হাওলাদার আরও বলেন, সরকারের ইতিবাচক মনোভাব এবং সমস্যা সমাধানের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান জানিয়েই আমরা উৎপাদন বন্ধের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, আমরা সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখব এবং যদি খামারিদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে আমরা দ্বিধা করব না।

তিনি বলেন, সরকারের এই গঠনমূলক সাড়া আমাদের (খামারিদের) মধ্যে নতুন করে আশার আলো সঞ্চার করেছে। যার ফলস্বরূপ সবার সঙ্গে আলোচনা করে উৎপাদন বন্ধের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পোল্ট্রি খাতের বিভিন্ন স্তরে বিরাজমান সিন্ডিকেট, অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম এবং প্রান্তিক খামারিদের অন্যান্য সমস্যা বৈঠকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। খামারিদের পক্ষ থেকে পোল্ট্রি পণ্যের ন্যায্য দাম নির্ধারণের জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং একটি স্বাধীন পোল্ট্রি মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং সমস্যা সমাধানে তাদের আন্তরিকতা প্রকাশ করেছেন। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, উত্থাপিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বৈঠকে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার স্থিতিশীল করা এবং প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষা করার বিষয়টিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল বিপিএ ঘোষণা করেছিল যে, রমজান ও ঈদ মৌসুমে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পরেও সরকারের উদাসীনতার কারণে প্রান্তিক খামারিরা ১ মে থেকে তাদের খামারগুলোতে উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন। তাদের অভিযোগ ছিল, গত দুই মাসে ডিম ও মুরগি খাতে তাদের সম্মিলিত ক্ষতি প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।

এসময় তারা ১০ দাবি ঘোষণা করেন। সেগুলো হচ্ছে —

১. জাতীয় মূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করতে হবে।

২. সরকারিভাবে ফিড মিল ও হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে।

৩. কোম্পানির কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করতে হবে।

৪. স্বাধীন বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করতে হবে।

৫. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসন করতে হবে।

৬. খামারিদের রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড প্রদান করতে হবে।

৭. জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।

৮. সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৯. প্রশাসনিক অভিযান চালিয়ে ন্যায্য বাজার নিশ্চিত করতে হবে।

১০. জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক খামারিদের বরাদ্দ ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১ মে থেকে ডিম-মুরগির খামার বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার

Update Time : 06:30:28 am, Tuesday, 22 April 2025
৮৯

অগ্নিশিখা প্রতিবেদক: আগামী ১ মে থেকে সারা দেশে ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী খামার বন্ধ রাখার ঘোষণা প্রত্যাহার করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

সোমবার (২১ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার জানিয়েছেন, সরকারের আশ্বাসে ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস এবং আন্তরিক আগ্রহের প্রকাশ পাওয়ায় খামারিরা আপাতত কঠোর অবস্থানে যাচ্ছেন না। গতকাল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রান্তিক খামারিদের উত্থাপিত ১০ দফা দাবির প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখিয়েছে। অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বেশ কিছু যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার কারণ ব্যাখ্যা করে সুমন হাওলাদার আরও বলেন, সরকারের ইতিবাচক মনোভাব এবং সমস্যা সমাধানের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান জানিয়েই আমরা উৎপাদন বন্ধের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, আমরা সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখব এবং যদি খামারিদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে আমরা দ্বিধা করব না।

তিনি বলেন, সরকারের এই গঠনমূলক সাড়া আমাদের (খামারিদের) মধ্যে নতুন করে আশার আলো সঞ্চার করেছে। যার ফলস্বরূপ সবার সঙ্গে আলোচনা করে উৎপাদন বন্ধের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পোল্ট্রি খাতের বিভিন্ন স্তরে বিরাজমান সিন্ডিকেট, অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম এবং প্রান্তিক খামারিদের অন্যান্য সমস্যা বৈঠকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। খামারিদের পক্ষ থেকে পোল্ট্রি পণ্যের ন্যায্য দাম নির্ধারণের জন্য একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং একটি স্বাধীন পোল্ট্রি মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং সমস্যা সমাধানে তাদের আন্তরিকতা প্রকাশ করেছেন। তারা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, উত্থাপিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বৈঠকে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার স্থিতিশীল করা এবং প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষা করার বিষয়টিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল বিপিএ ঘোষণা করেছিল যে, রমজান ও ঈদ মৌসুমে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পরেও সরকারের উদাসীনতার কারণে প্রান্তিক খামারিরা ১ মে থেকে তাদের খামারগুলোতে উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন। তাদের অভিযোগ ছিল, গত দুই মাসে ডিম ও মুরগি খাতে তাদের সম্মিলিত ক্ষতি প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।

এসময় তারা ১০ দাবি ঘোষণা করেন। সেগুলো হচ্ছে —

১. জাতীয় মূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করতে হবে।

২. সরকারিভাবে ফিড মিল ও হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে।

৩. কোম্পানির কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করতে হবে।

৪. স্বাধীন বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করতে হবে।

৫. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসন করতে হবে।

৬. খামারিদের রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড প্রদান করতে হবে।

৭. জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।

৮. সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৯. প্রশাসনিক অভিযান চালিয়ে ন্যায্য বাজার নিশ্চিত করতে হবে।

১০. জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক খামারিদের বরাদ্দ ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।