Dhaka 10:09 am, Tuesday, 2 December 2025

পীরগঞ্জে আকিকার দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ ৪ শতাধিক মানুষ,ঢাকায় ফিরতে পারছেন না গার্মেন্টস শ্রমিক

Reporter Name
  • Update Time : 06:10:49 am, Monday, 7 April 2025
  • / 106 Time View
১৩

হাবিবুর রহমান.পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের গাজী খাঁ দক্ষিণ সোনারপাড়া গ্রামে আকিকার দাওয়াত খেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চার শতাধিক মানুষ। এ যাবৎ হাসপাতালে অর্ধশতাধিক রোগি ভর্তি হয়েছেন।

গতকাল রোববার দুপুরেও ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।গত (৩ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার স্থানীয় গাজী খাঁ (দক্ষিণ সোনারপাড়া) গ্রামের আব্দুস সালাম মিয়ার ছেলে গামের্ন্টস শ্রমিক লিটন মিয়ার বাড়িতে তার ছেলের আকিকার দাওয়াতের আয়োজন করে। দাওয়াত খাওয়ার পর বিকেল থেকে অনেকের জ্বর, বমি, পেট ব্যথা ও ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় অধিকাংশরাই বাড়িতে চিকিৎসা নিতে থাকলেও শনিবার থেকে হাসপাতালে ছুটে আসতে থাকেন অনেকে। এখনও অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অসুস্থদের মধ্যে অর্ধ-শতাধিক গার্মেন্টস কর্মী, যারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন এবং সপ্তাহের শুরুতেই ঢাকায় ফিরার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অবস্থার কারণে এখন অনেকেই ঢাকায় ফিরতে পারছেন না, ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন তারা। আয়োজনকারী লিটন মিয়া জানান, আমারা খুবই যত্নসহকারে খাবারের আয়োজন করেছিলাম। তারপরও কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা নিজেরাও অসুস্থ। তবে, এটা ষড়যন্ত্রও হতে পারে। নয়তো এমনটা হওয়ার কথা নয়।

দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ আজিজুল হক বলেন, দাওয়াত খেয়ে আসার পর রাত থেকেই পাতলা পায়খানা সহ জ্বর। পরে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি। আমার পরিবারের অন্যদের একই অবস্থা।

শাফিউল ইসলাম বলেন, আকিকার দাওয়াত খাওয়ার পরেই সকাল থেকে পাতলা পায়খানা সহ প্রচন্ড জ্বর। আমি একজন ঢাকার গার্মেন্টস কর্মী। আজ থেকে আমার অফিস খোলা হলেও আমি অসুস্থতার জন্য ঢাকায় যেতে পারিনি। জানিনা চাকরি থাকবে।

হাসপাতালে সপরিবারে ভর্তি বাবুনপুর গ্রামের এনামুল হক, স্ত্রী সালমা বেগম, দুই কন্যা আদিবা ও আতিকা। তারা জানান, স্বামী স্ত্রী দুজনেই গাজীপুরের স্কয়ার ফ্যাশন গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ছুটি শেষ হলেও সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফিরতে পারছি না। হাসপাতালে ভর্তি বেবিলন ড্রিমস লিমিটেডের গার্মেন্টস শ্রমিক শাফিউল ইসলাম হাসপাতালের বেডে শুয়ে শারিরিক সুস্থতার চাইতে চাকুরী বাঁচানোর টেনশনের কথা জানান। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি বাবনপুরের সালমা গাজীপুরের স্কয়ার গামের্ন্টস ফ্যাক্টরিতে, মাসুমা বেগম গাজীপুর বাইপাস ক্লোসাম এয়ারলেট, আম্বিয়া বেগম, গোলেজ তারা সহ ১০/১২ জন বিছানায় পেটের যন্ত্রণায় ছটপট করছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোঃ তরিকুল ইসলাম মন্ডল (রিমন) বলেন, চলমান মওসুমে ডাইরিয়ার প্রকোপ বেশি। শুক্রবার থেকে হাসপাতালে হঠাৎ করে ফুট পয়জনিং জনিত রোগীর ভীড় বাড়তে থাকে। দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ হওয়া এখন পর্যন্ত অর্ধ-শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। খাবারে ফুড পয়জনিংয়ের কারণে এমনটা হতে পারে। এছাড়াও খাবারে সংক্রমিত কিছু উপাদান থাকতে পারে, যা থেকে এই সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সহায়তা চাওয়া হয়েছে কি না তা এখনো জানা যায় যায়নি।

ওসি এমএ ফারুক জানান, অতিরিক্ত গরমে গরুর গোস্ত প্রবলেম থাকতে পারে, বিষয়টি নিয়ে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।

শ্রমিকদের কোম্পানিতে যাতে সমস্যা না হয় যেজন্য যোগাযোগ করছে পুলিশ, হাসপাতালের সাথে সমন্বয় করে ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করা হবে।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পীরগঞ্জে আকিকার দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ ৪ শতাধিক মানুষ,ঢাকায় ফিরতে পারছেন না গার্মেন্টস শ্রমিক

Update Time : 06:10:49 am, Monday, 7 April 2025
১৩

হাবিবুর রহমান.পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের গাজী খাঁ দক্ষিণ সোনারপাড়া গ্রামে আকিকার দাওয়াত খেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চার শতাধিক মানুষ। এ যাবৎ হাসপাতালে অর্ধশতাধিক রোগি ভর্তি হয়েছেন।

গতকাল রোববার দুপুরেও ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।গত (৩ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার স্থানীয় গাজী খাঁ (দক্ষিণ সোনারপাড়া) গ্রামের আব্দুস সালাম মিয়ার ছেলে গামের্ন্টস শ্রমিক লিটন মিয়ার বাড়িতে তার ছেলের আকিকার দাওয়াতের আয়োজন করে। দাওয়াত খাওয়ার পর বিকেল থেকে অনেকের জ্বর, বমি, পেট ব্যথা ও ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় অধিকাংশরাই বাড়িতে চিকিৎসা নিতে থাকলেও শনিবার থেকে হাসপাতালে ছুটে আসতে থাকেন অনেকে। এখনও অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অসুস্থদের মধ্যে অর্ধ-শতাধিক গার্মেন্টস কর্মী, যারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন এবং সপ্তাহের শুরুতেই ঢাকায় ফিরার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অবস্থার কারণে এখন অনেকেই ঢাকায় ফিরতে পারছেন না, ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন তারা। আয়োজনকারী লিটন মিয়া জানান, আমারা খুবই যত্নসহকারে খাবারের আয়োজন করেছিলাম। তারপরও কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা নিজেরাও অসুস্থ। তবে, এটা ষড়যন্ত্রও হতে পারে। নয়তো এমনটা হওয়ার কথা নয়।

দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ আজিজুল হক বলেন, দাওয়াত খেয়ে আসার পর রাত থেকেই পাতলা পায়খানা সহ জ্বর। পরে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি। আমার পরিবারের অন্যদের একই অবস্থা।

শাফিউল ইসলাম বলেন, আকিকার দাওয়াত খাওয়ার পরেই সকাল থেকে পাতলা পায়খানা সহ প্রচন্ড জ্বর। আমি একজন ঢাকার গার্মেন্টস কর্মী। আজ থেকে আমার অফিস খোলা হলেও আমি অসুস্থতার জন্য ঢাকায় যেতে পারিনি। জানিনা চাকরি থাকবে।

হাসপাতালে সপরিবারে ভর্তি বাবুনপুর গ্রামের এনামুল হক, স্ত্রী সালমা বেগম, দুই কন্যা আদিবা ও আতিকা। তারা জানান, স্বামী স্ত্রী দুজনেই গাজীপুরের স্কয়ার ফ্যাশন গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ছুটি শেষ হলেও সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফিরতে পারছি না। হাসপাতালে ভর্তি বেবিলন ড্রিমস লিমিটেডের গার্মেন্টস শ্রমিক শাফিউল ইসলাম হাসপাতালের বেডে শুয়ে শারিরিক সুস্থতার চাইতে চাকুরী বাঁচানোর টেনশনের কথা জানান। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি বাবনপুরের সালমা গাজীপুরের স্কয়ার গামের্ন্টস ফ্যাক্টরিতে, মাসুমা বেগম গাজীপুর বাইপাস ক্লোসাম এয়ারলেট, আম্বিয়া বেগম, গোলেজ তারা সহ ১০/১২ জন বিছানায় পেটের যন্ত্রণায় ছটপট করছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোঃ তরিকুল ইসলাম মন্ডল (রিমন) বলেন, চলমান মওসুমে ডাইরিয়ার প্রকোপ বেশি। শুক্রবার থেকে হাসপাতালে হঠাৎ করে ফুট পয়জনিং জনিত রোগীর ভীড় বাড়তে থাকে। দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ হওয়া এখন পর্যন্ত অর্ধ-শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। খাবারে ফুড পয়জনিংয়ের কারণে এমনটা হতে পারে। এছাড়াও খাবারে সংক্রমিত কিছু উপাদান থাকতে পারে, যা থেকে এই সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সহায়তা চাওয়া হয়েছে কি না তা এখনো জানা যায় যায়নি।

ওসি এমএ ফারুক জানান, অতিরিক্ত গরমে গরুর গোস্ত প্রবলেম থাকতে পারে, বিষয়টি নিয়ে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।

শ্রমিকদের কোম্পানিতে যাতে সমস্যা না হয় যেজন্য যোগাযোগ করছে পুলিশ, হাসপাতালের সাথে সমন্বয় করে ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করা হবে।