Dhaka 12:17 am, Saturday, 22 November 2025

রোজা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হলে করণীয় কী?

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:19:37 am, Tuesday, 18 March 2025
  • 134 Time View

ইসলাম ডেস্ক: পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘লোকেরা তোমাকে ঋতু সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে। বলো, ‘তা অশুচি’। কাজেই ঋতুকালে স্ত্রী-সহবাস থেকে বিরত থাক এবং যে পর্যন্ত পবিত্র না হয়, তাদের কাছে যেয়ো না। যখন পবিত্র হবে, তখন তাদের সঙ্গে সহবাস করো, যেভাবে আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন আর পবিত্রতা অবলম্বীদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)

ঋতুস্রাবকালীন সময়ে নারীদের ওপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ থাকে না এবং এ অবস্থায় রোজা রাখলে তা শুদ্ধও হয় না। রমজানের রোজা রাখার পর দিনের বেলা কোনো নারীর যদি ঋতুস্রাব শুরু হয়, তাহলে তিনি রোজা ভেঙ্গে ফেলবেন এবং তখন থেকেই খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন। পরবর্তীতে এই রোজাটি এবং ঋতুস্রাবের কারণে যে কয়টি রোজা তিনি রাখতে পারবেন না, সেগুলোর কাজা করে নেবেন।

আয়েশা (রা.) বলেন, كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وآله وسلم فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلا نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاةِ

আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনকালে আমাদের ঋতুস্রাব হলে আমাদেরকে (রোজা ভেঙে পরবর্তীতে) রোজার কাজা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হতো, কিন্তু নামাজের কাজা আদায়ের আদেশ দেওয়া হতো না। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

ঋতুস্রাবের কারণে রোজা না রাখলে কি খাওয়া দাওয়া করা যাবে?
যেহেতু ঋতুস্রাবকালীন শারীরিক দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে রোজা রাখা কষ্টকর হতে পারে, তাই ইসলাম এ অবস্থায় নারীদের জন্য রোজাহীন থাকাকে আবশ্যক করেছে, যা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নারীদের প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহর এই অনুগ্রহ খুশি মনে গ্রহণ করে এ সময় স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করা উচিত।

অনেক নারী এ সময় সামান্য কিছু খেয়ে বা কিছু তরল পান করে সারাদিন রোজার মতো থাকতে চান—এটি শরিয়তের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। শরীয়ত এই বিধানের মাধ্যমে তাদের কষ্ট লাঘব করতে এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষা করতে চেয়েছে। তাই ঋতুস্রাবকালীন নারীর জন্য অন্য সময়ের মতোই স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করা উচিত, এতে কোনো গুনাহ বা দোষ নেই।

তবে রমজানে দিনের বেলা প্রকাশ্যে খাওয়া দাওয়া করলে যেহেতু অন্যদের মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে, তাই এ সময় প্রকাশ্যে খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

রমজানে ওষুধ খেয়ে ঋতু্স্রাব বন্ধ রাখা যাবে?
অনেক নারী রমজানে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে ওষুধ বা পিল গ্রহণ করে যেন পুরো রমজান মাস একটানা রোজা রাখতে পারেন। ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব রাখলে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে রোজা শুদ্ধ হবে। তবে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার জন্য ওষুধ খাওয়া জায়েজ হওয়ার শর্ত হলো, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করবেন যে এসব ওষুধ গ্রহণের ফলে কোনো তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে না। যদি এতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে তা গ্রহণ করা জায়েজ হবে না। কারণ ইসলামি শরিয়তে অন্যের ক্ষতি করা যেমন নাজায়েজ, নিজের ক্ষতি করাও নাজায়েজ। ইসলামে স্বাস্থ্য রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ইসলাম ঋতুস্রাবকে নারীদের ত্রুটি বিবেচনা করে না এবং ঋতুস্রাবের কারণে রোজা না রাখতে পারলে গুনাহ হবে না বা রমজান পালনের সওয়াবও কমবে না। তাই ক্ষতিকর না হলে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার জন্য ওষুধ গ্রহণ করা যদিও জায়েজ, তথাপি একজন মুসলমান নারীর জন্য আল্লাহ তাআলার নির্ধারণ মেনে নেওয়া, ঋতুস্রাব স্বাভাবিক রাখা এবং এ সময়ে রোজা ভাঙাই বেশি ফজিলতপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Mottakim Ahmed

Popular Post

সরাইল জাতীয় নাগরিক পার্টি উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত

রোজা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হলে করণীয় কী?

Update Time : 10:19:37 am, Tuesday, 18 March 2025

ইসলাম ডেস্ক: পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘লোকেরা তোমাকে ঋতু সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে। বলো, ‘তা অশুচি’। কাজেই ঋতুকালে স্ত্রী-সহবাস থেকে বিরত থাক এবং যে পর্যন্ত পবিত্র না হয়, তাদের কাছে যেয়ো না। যখন পবিত্র হবে, তখন তাদের সঙ্গে সহবাস করো, যেভাবে আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন আর পবিত্রতা অবলম্বীদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)

ঋতুস্রাবকালীন সময়ে নারীদের ওপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ থাকে না এবং এ অবস্থায় রোজা রাখলে তা শুদ্ধও হয় না। রমজানের রোজা রাখার পর দিনের বেলা কোনো নারীর যদি ঋতুস্রাব শুরু হয়, তাহলে তিনি রোজা ভেঙ্গে ফেলবেন এবং তখন থেকেই খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন। পরবর্তীতে এই রোজাটি এবং ঋতুস্রাবের কারণে যে কয়টি রোজা তিনি রাখতে পারবেন না, সেগুলোর কাজা করে নেবেন।

আয়েশা (রা.) বলেন, كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وآله وسلم فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلا نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلاةِ

আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনকালে আমাদের ঋতুস্রাব হলে আমাদেরকে (রোজা ভেঙে পরবর্তীতে) রোজার কাজা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হতো, কিন্তু নামাজের কাজা আদায়ের আদেশ দেওয়া হতো না। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

ঋতুস্রাবের কারণে রোজা না রাখলে কি খাওয়া দাওয়া করা যাবে?
যেহেতু ঋতুস্রাবকালীন শারীরিক দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে রোজা রাখা কষ্টকর হতে পারে, তাই ইসলাম এ অবস্থায় নারীদের জন্য রোজাহীন থাকাকে আবশ্যক করেছে, যা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নারীদের প্রতি এক বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহর এই অনুগ্রহ খুশি মনে গ্রহণ করে এ সময় স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করা উচিত।

অনেক নারী এ সময় সামান্য কিছু খেয়ে বা কিছু তরল পান করে সারাদিন রোজার মতো থাকতে চান—এটি শরিয়তের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। শরীয়ত এই বিধানের মাধ্যমে তাদের কষ্ট লাঘব করতে এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষা করতে চেয়েছে। তাই ঋতুস্রাবকালীন নারীর জন্য অন্য সময়ের মতোই স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করা উচিত, এতে কোনো গুনাহ বা দোষ নেই।

তবে রমজানে দিনের বেলা প্রকাশ্যে খাওয়া দাওয়া করলে যেহেতু অন্যদের মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে, তাই এ সময় প্রকাশ্যে খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

রমজানে ওষুধ খেয়ে ঋতু্স্রাব বন্ধ রাখা যাবে?
অনেক নারী রমজানে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে ওষুধ বা পিল গ্রহণ করে যেন পুরো রমজান মাস একটানা রোজা রাখতে পারেন। ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব রাখলে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে রোজা শুদ্ধ হবে। তবে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার জন্য ওষুধ খাওয়া জায়েজ হওয়ার শর্ত হলো, চিকিৎসকরা নিশ্চিত করবেন যে এসব ওষুধ গ্রহণের ফলে কোনো তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে না। যদি এতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে তা গ্রহণ করা জায়েজ হবে না। কারণ ইসলামি শরিয়তে অন্যের ক্ষতি করা যেমন নাজায়েজ, নিজের ক্ষতি করাও নাজায়েজ। ইসলামে স্বাস্থ্য রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

ইসলাম ঋতুস্রাবকে নারীদের ত্রুটি বিবেচনা করে না এবং ঋতুস্রাবের কারণে রোজা না রাখতে পারলে গুনাহ হবে না বা রমজান পালনের সওয়াবও কমবে না। তাই ক্ষতিকর না হলে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার জন্য ওষুধ গ্রহণ করা যদিও জায়েজ, তথাপি একজন মুসলমান নারীর জন্য আল্লাহ তাআলার নির্ধারণ মেনে নেওয়া, ঋতুস্রাব স্বাভাবিক রাখা এবং এ সময়ে রোজা ভাঙাই বেশি ফজিলতপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।