দুর্নীতি লাখো মানুষের দমবন্ধ করে ফেলেছে : তারেক রহমান
- Update Time : 04:08:48 pm, Tuesday, 9 December 2025
- / 20 Time View
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দমবন্ধ করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘খাবারের দাম কেন বাড়ে, স্কুলে ভালো পড়াশোনা কেন মেলে না, রাস্তায় নিরাপত্তা কেন নেই, সব কিছুর পিছনে একটাই কারণ তা হলো- দুর্নীতি।’
আজ মঙ্গলবার সকালে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন তারেক রহমান। পাশাপাশি আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপি কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে সেসকল বিষয় নিয়েও লেখেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে- তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন। মাসের পর মাস ধরে একটি সাধারণ সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকান। হাসপাতালে গিয়ে এক তরুণের পরিবার কীভাবে ভোগান্তিতে পড়ে, সেটা শুনুন। অথবা ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি দেখুন।’
বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এটা বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস আমাদের সেই সময়কার লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল। আর সেই সময়টা এসেছিল মূলত বিএনপির আমলেই।’
তারেক রহমান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়েছিলেন। অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমাতে পরিচ্ছন্ন সরকারি সেবা ও অর্থনীতিকে মুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে শুরু হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন। নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা আর স্বচ্ছ নজরদারিও কার্যকর করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে ‘দুদক’ গঠন। এটি এমন এক স্বাধীন কমিশন, যেখানে সরকার চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এডিবি সবাই বলেছিল- এটা বাংলাদেশের জবাবদিহিতার বড় অগ্রগতি।’
তিনি আরও বলেন, টিআইবি’র জরিপেও ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে পরিস্থিতি উন্নতির চিত্র তুলে ধরা হয়। মানুষ নিজেরাই দুর্নীতি কমার কথা বলেছে। এটা কোনো গল্প নয়, তখনকার সংস্কারের প্রমাণ।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানি লন্ডারিং-বিরোধী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র এবং নিয়মের মধ্যে সরকারি স্বচ্ছ ক্রয় নীতি চালু করে যা পরবর্তীতে দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন খাতে উন্মুক্ত বাজার গড়ে তোলে প্রতিযোগিতা বাড়ানো হয়। ফলে দুর্নীতি কমে এবং জনগণের সুযোগ বাড়ে। এছাড়া, প্রশাসনের জটিলতা কমিয়ে এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে এমন কিছু বড় পরিবর্তন ঘটেছে যার জন্য বিএনপি গর্ব করতে পারে।
তারেক রহমান বলেন, ‘দুর্নীতি কমানোর ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে।’
আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালাতে বিএনপির কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন তারেক রহমান। সেগুলো হল-
১. প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা; কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে।
২. পুরোপুরি স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল-টাইম অডিট এবং শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।
৩. বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ।
৪. ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট; সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো (বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০-৬০% দুর্নীতি কমতে পারে)।
৫. হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান।
৬. নৈতিক শিক্ষা: স্কুল-কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা।
৭. শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন অডিট এবং সংসদের কঠোর তদারকি।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বহু বছরের অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন থাকলে পরিবর্তন সম্ভব।’
তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়—বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।’
সূত্র: বাসস।

























