Dhaka 9:23 pm, Monday, 8 December 2025

বিশেষ কেউ ভালো, বাকি সবাই খারাপ এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: তারেক রহমান

অগ্নিশিখা অনলাইন
  • Update Time : 08:27:38 pm, Monday, 8 December 2025
  • / 19 Time View
২৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘একজন বিশেষ কেউ ভালো, বাকি সবাই খারাপ— এটি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।’

তিনি আরো বলেন, আমরা গত ১৬ বছর ধরে দেখেছি— ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’। দুঃখজনকভাবে হলেও ৫ তারিখের পরে কেন জানি মনে হচ্ছে— এমন ভাবনার পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং অত্যন্ত জরুরি। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে, মতামত দেওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু অবশ্যই একজন ভালো আর সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। একজন বিশেষ কেউ ভালো, বাকি সবাই খারাপ— এটি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারাদেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।

তারেক রহমান শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন। কারণ, বর্তমানে বহু ষড়যন্ত্র চলছে যে, কীভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ব্যাহত করা যায়।

বাংলাদেশের মানুষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে স্বৈরাচার বিতাড়িত করার আন্দোলনে প্রাণপণ লড়াই করেছে। তাই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড একমাত্র দেশের সাধারণ মানুষ। এ আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড একজন গৃহবধূ, ক্ষুদ্র মুদির দোকানদার, শিক্ষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, বাসের হেলপার, ছাত্র-জনতা এমনকি ছোট ছোট শিশুরা। ৬৩ জন শিশু সেই আন্দোলনে মারা গিয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল একটাই— তা হলো দেশে একটি জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। জবাবদিহিতা থাকলেই ধীরে ধীরে শুভ পরিবর্তন ঘটা শুরু হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘পেটের ক্ষুধা বাস্তবতার কথা বলে। খালি পকেট বাস্তব কথা বলে। পত্র- পত্রিকার পাতা খুললেই দেখছি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের হাজারো সমস্যা। মিল-ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বলছে— আমরা বিনিয়োগ করতে চাই না। হাসপাতালগুলোতে ঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা নেই। স্কুল-কলেজে সেইভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। রাস্তায় বের হলে ছিনতাই, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সুস্থ শরীরে ফিরে আসা যাবে কি না সেই নিশ্চয়তা নেই। সবকিছু অস্বাভাবিকভাবে চলছে। এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এ অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই, নেই এবং নেই।’

দেশে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। কারণ, সেখানে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। মানুষ বেঁচে আছে কি মরে গেছে এসবেরও কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। একমাত্র গণতন্ত্র সমাজে, দেশে এবং রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে একমাত্র নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। দেশ, মানুষ ও রাষ্ট্রের যাতে ভালো হয়, তিল তিল করেও যদি ভালো হয়, তা করতে পারে কেবল গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার।’

একমাত্র বিএনপি জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা বলছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দলের অনেক বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে, গড়ে তোলে এমন চিন্তা ভাবনা নিয়ে আলোচনা বিএনপি ছাড়া আর কেউই করে না। বিএনপি জনগণের কল্যাণে কী কী কাজ করবে তা প্রতিনিয়ত জাতির সামনে উপস্থাপন করছে। দেশের শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, নারী, সমাজ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ কে করেছে বিএনপি ছাড়া? বিএনপির মতো করে প্রতিনিয়ত কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে না।’

আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কিছু বার্তা উপস্থাপন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রত্যেকের এলাকায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হয়তো এমনও হতে পারে— তোমার এলাকায় দলের পক্ষ থেকে যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, তাকে তোমার তেমন পছন্দ না কিংবা সম্পর্ক ভালো কিন্তু একটু কম। ভাইরে তুমি তো প্রার্থীর জন্য নয়, ধানের শীষের জন্য কাজ করবে। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে দল। মুখ্য হচ্ছে দেশ এবং দেশ গড়ার পরিকল্পনা। আর মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবারো খাল খনন কর্মসূচি শুরু হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন উনি খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে আবার দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে, এই খাল খননের কাজ আবার শুরু করব।

খাল খননের অনেক কারণ রয়েছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন খাল খনন করেছিলেন, খাল খনন করার মাধ্যমে উনি একদিকে যেমন বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, আরেকদিকে ঠিক একইভাবে ফসলের সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সেচ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বাংলাদেশের যেখানে একটি ফসল হতো, সেখানে দু’টি ফসল হওয়া শুরু করলো। শুধু পানি সরবরাহ ঠিকভাবে পাওয়ার জন্য, সেচ সুবিধার জন্য। যেখানে দু’টি হতো, সেখানে তিনটি ফসল হওয়া শুরু করলো, শুধু সেচ সুবিধা পাওয়ার জন্য; এই বাংলাদেশ— যেখানে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল কয়েক বছর আগে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় সেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তো হলো, অল্প পরিমাণ হলেও আমরা বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

উপস্থিত ছাত্রদল নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, আন্দোলন সফল করার জন্য যেমন জনগণের সহযোগিতা লেগেছিল, তাদের অংশগ্রহণ জরুরি ছিল, এই দেশ গড়ার পরিকল্পনা সফল করতে হলে, পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা পারব না। তাহলে জনগণকে যদি অংশগ্রহণ করাতে হয়, আন্দোলনের সময়ে যেমন জনগণের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়েছিলে তোমরা, কেন আন্দোলনে আসা প্রয়োজন, এখনো সেটাই করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্বলিত লিফলেট নিয়ে ঘরে ঘওে, দুয়ারে দুয়ারে তোমাদের যেতে হবে। তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এলেই এ দেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে। তা না হলে ভয়াবহ কিছু হয়তো অপেক্ষা করছে। আমরা যে যার অবস্থান থেকে আমাদের পরিকল্পনাগুলো যদি ৪০ ভাগও বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কাজেই আর বসে থাকার সময় নেই। দেশ গঠনের এবং জনগণের কল্যাণের পরিকল্পনা সম্বলিত লিফলেট প্রত্যেকে যে যতটুকু পারো, জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তোমরা প্রত্যেকেই হবে একেক জন দেশ গড়ার অংশীদার।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)। উপস্থিত ছিলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে, এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।

সূত্র: বাসস।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিশেষ কেউ ভালো, বাকি সবাই খারাপ এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: তারেক রহমান

Update Time : 08:27:38 pm, Monday, 8 December 2025
২৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘একজন বিশেষ কেউ ভালো, বাকি সবাই খারাপ— এটি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।’

তিনি আরো বলেন, আমরা গত ১৬ বছর ধরে দেখেছি— ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’। দুঃখজনকভাবে হলেও ৫ তারিখের পরে কেন জানি মনে হচ্ছে— এমন ভাবনার পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং অত্যন্ত জরুরি। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে, মতামত দেওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু অবশ্যই একজন ভালো আর সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। একজন বিশেষ কেউ ভালো, বাকি সবাই খারাপ— এটি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারাদেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।

তারেক রহমান শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন। কারণ, বর্তমানে বহু ষড়যন্ত্র চলছে যে, কীভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ব্যাহত করা যায়।

বাংলাদেশের মানুষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে স্বৈরাচার বিতাড়িত করার আন্দোলনে প্রাণপণ লড়াই করেছে। তাই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড একমাত্র দেশের সাধারণ মানুষ। এ আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড একজন গৃহবধূ, ক্ষুদ্র মুদির দোকানদার, শিক্ষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, বাসের হেলপার, ছাত্র-জনতা এমনকি ছোট ছোট শিশুরা। ৬৩ জন শিশু সেই আন্দোলনে মারা গিয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল একটাই— তা হলো দেশে একটি জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। জবাবদিহিতা থাকলেই ধীরে ধীরে শুভ পরিবর্তন ঘটা শুরু হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘পেটের ক্ষুধা বাস্তবতার কথা বলে। খালি পকেট বাস্তব কথা বলে। পত্র- পত্রিকার পাতা খুললেই দেখছি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের হাজারো সমস্যা। মিল-ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বলছে— আমরা বিনিয়োগ করতে চাই না। হাসপাতালগুলোতে ঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা নেই। স্কুল-কলেজে সেইভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। রাস্তায় বের হলে ছিনতাই, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সুস্থ শরীরে ফিরে আসা যাবে কি না সেই নিশ্চয়তা নেই। সবকিছু অস্বাভাবিকভাবে চলছে। এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এ অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই, নেই এবং নেই।’

দেশে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। কারণ, সেখানে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। মানুষ বেঁচে আছে কি মরে গেছে এসবেরও কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। একমাত্র গণতন্ত্র সমাজে, দেশে এবং রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে একমাত্র নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। দেশ, মানুষ ও রাষ্ট্রের যাতে ভালো হয়, তিল তিল করেও যদি ভালো হয়, তা করতে পারে কেবল গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার।’

একমাত্র বিএনপি জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা বলছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দলের অনেক বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে, গড়ে তোলে এমন চিন্তা ভাবনা নিয়ে আলোচনা বিএনপি ছাড়া আর কেউই করে না। বিএনপি জনগণের কল্যাণে কী কী কাজ করবে তা প্রতিনিয়ত জাতির সামনে উপস্থাপন করছে। দেশের শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, নারী, সমাজ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ কে করেছে বিএনপি ছাড়া? বিএনপির মতো করে প্রতিনিয়ত কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে না।’

আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কিছু বার্তা উপস্থাপন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রত্যেকের এলাকায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হয়তো এমনও হতে পারে— তোমার এলাকায় দলের পক্ষ থেকে যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, তাকে তোমার তেমন পছন্দ না কিংবা সম্পর্ক ভালো কিন্তু একটু কম। ভাইরে তুমি তো প্রার্থীর জন্য নয়, ধানের শীষের জন্য কাজ করবে। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে দল। মুখ্য হচ্ছে দেশ এবং দেশ গড়ার পরিকল্পনা। আর মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবারো খাল খনন কর্মসূচি শুরু হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন উনি খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে আবার দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে, এই খাল খননের কাজ আবার শুরু করব।

খাল খননের অনেক কারণ রয়েছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন খাল খনন করেছিলেন, খাল খনন করার মাধ্যমে উনি একদিকে যেমন বন্যাকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, আরেকদিকে ঠিক একইভাবে ফসলের সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সেচ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বাংলাদেশের যেখানে একটি ফসল হতো, সেখানে দু’টি ফসল হওয়া শুরু করলো। শুধু পানি সরবরাহ ঠিকভাবে পাওয়ার জন্য, সেচ সুবিধার জন্য। যেখানে দু’টি হতো, সেখানে তিনটি ফসল হওয়া শুরু করলো, শুধু সেচ সুবিধা পাওয়ার জন্য; এই বাংলাদেশ— যেখানে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল কয়েক বছর আগে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় সেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তো হলো, অল্প পরিমাণ হলেও আমরা বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

উপস্থিত ছাত্রদল নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, আন্দোলন সফল করার জন্য যেমন জনগণের সহযোগিতা লেগেছিল, তাদের অংশগ্রহণ জরুরি ছিল, এই দেশ গড়ার পরিকল্পনা সফল করতে হলে, পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা পারব না। তাহলে জনগণকে যদি অংশগ্রহণ করাতে হয়, আন্দোলনের সময়ে যেমন জনগণের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়েছিলে তোমরা, কেন আন্দোলনে আসা প্রয়োজন, এখনো সেটাই করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্বলিত লিফলেট নিয়ে ঘরে ঘওে, দুয়ারে দুয়ারে তোমাদের যেতে হবে। তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এলেই এ দেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে। তা না হলে ভয়াবহ কিছু হয়তো অপেক্ষা করছে। আমরা যে যার অবস্থান থেকে আমাদের পরিকল্পনাগুলো যদি ৪০ ভাগও বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কাজেই আর বসে থাকার সময় নেই। দেশ গঠনের এবং জনগণের কল্যাণের পরিকল্পনা সম্বলিত লিফলেট প্রত্যেকে যে যতটুকু পারো, জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তোমরা প্রত্যেকেই হবে একেক জন দেশ গড়ার অংশীদার।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)। উপস্থিত ছিলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে, এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান।

সূত্র: বাসস।