Dhaka 2:56 pm, Thursday, 4 December 2025

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রুয়ান্ডা-ডিআর কঙ্গো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত

Reporter Name
  • Update Time : 07:58:46 am, Thursday, 4 December 2025
  • / 15 Time View
১৯

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রুয়ান্ডা এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (ডিআর কঙ্গো) নেতাদের এক বৈঠকে মুখোমুখি করছেন। কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত থাকলেও তিনি এ উদ্যোগকে তাঁর সাম্প্রতিক শান্তি অর্জনের আরেকটি সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে যাচ্ছেন।

ওয়াশিংটন থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

পূর্ব ডিআর কঙ্গোর অস্থিতিশীল অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাই এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য। বৈদ্যুতিক গাড়িসহ আধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক খনিজই পাওয়া যায় এলাকাটিতে।

রুয়ান্ডার দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট পল কাগামে অশান্ত প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে বর্তমানে সংঘাতের মাঠে সামরিকভাবে স্পষ্ট এগিয়ে আছেন। ডিআর কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তশিসেকেদির সঙ্গে ট্রাম্পের যৌথ বৈঠক হবে নতুন নামে চালু হওয়া ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসে। সরকারি ব্যয় কমাতে প্রতিষ্ঠানটি ট্রাম্পই একসময় বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, দুই নেতা একটি শান্তিচুক্তি সই করবেন। পাঁচ মাস আগে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে আরেকটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন।

বৈঠকের আগের দিনও পূর্ব কঙ্গোতে তীব্র লড়াই চলেছে। রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র দল এম২৩ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় কঙ্গোর সরকারি বাহিনীর ওপর দাপট দেখিয়ে অবস্থান আরো মজবুত করেছে।

কাজিবার প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেনে চুবাকা কালেমবিরে জানান, ‘অনেক ঘরবাড়ি বোমায় ধ্বংস হয়েছে, বহু মানুষ নিহত হয়েছে।’

জানুয়ারির শেষের দিকে, এম২৩ গোমা ও বুকাভুর মতো  প্রধান নগরীগুলো দখল করায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নতুন করে উত্তেজিত হয়।

জুনের চুক্তির পর কাতারের মধ্যস্থতায় এম২৩ ও কিনশাসা সরকার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পরবর্তীতে উভয়পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তি ভাঙার অভিযোগ তোলে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ডিআর কঙ্গোসহ বহু সংঘাত তিনি বন্ধ করেছেন। দেশটি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া যুদ্ধের মধ্যে ছিল।

এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোর খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এখানে প্রবেশ করতে না পারলে চীনসহ অন্য দেশ এই সম্পদে অনুপ্রবেশ করতে পারে।

বিশ্বের অধিকাংশ কোবাল্টের মজুত ডিআর কঙ্গোতে। কোবাল্ট বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির অন্যতম প্রধান উপাদান। পাশাপাশি তামাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ খনিজও রয়েছে সেখানে।

ডিআর কঙ্গো জানিয়েছে, ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তিতে শান্তি, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমন্বয় ও প্রাকৃতিক সম্পদে কৌশলগত অংশীদারিত্ব অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

কঙ্গোর প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র টিনা সালামা বলেন, অর্থনৈতিক ধাপের আগে শান্তি স্থাপন নিয়েই তাদের জোর ছিল।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রে কাছে খনিজ বিক্রি করে দেওয়া নয়।‘ এটা খনিজের বিনিময়ে শান্তি এমন কথাও সত্য নয়।’

রুয়ান্ডা বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বন্ধের শর্ত হলো কঙ্গোকে অবশ্যই এফডিএলআরকে নিস্ক্রিয় করতে হবে। এফডিএলআর দলটি ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় জড়িত হুতু গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি সশস্ত্র সংগঠন।

গত সপ্তাহে কাগামে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, চুক্তি স্বাক্ষর বিলম্বিত করছে ডিআর কঙ্গো।

অন্যদিকে কঙ্গোর যোগাযোগমন্ত্রী প্যাট্রিক মুয়ায়া বলেন, মাঠের চলমান লড়াইই প্রমাণ করে রুয়ান্ডার সদিচ্ছা নেই।

তিনি বলেন, ‘এটাই দেখায়, রোয়ান্ডা এটা চায় না।’

উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অভিবাসন সংক্রান্ত আলোচনায় রয়েছে। ট্রাম্প ব্যাপক বহিষ্কার অভিযান চালাচ্ছেন। অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের অন্য দেশে পাঠানো তাঁর অগ্রাধিকার।

রুয়ান্ডা আগে ব্রিটেনের অভিবাসী গ্রহণ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিল। তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রুয়ান্ডা-ডিআর কঙ্গো শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত

Update Time : 07:58:46 am, Thursday, 4 December 2025
১৯

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রুয়ান্ডা এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (ডিআর কঙ্গো) নেতাদের এক বৈঠকে মুখোমুখি করছেন। কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা অব্যাহত থাকলেও তিনি এ উদ্যোগকে তাঁর সাম্প্রতিক শান্তি অর্জনের আরেকটি সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে যাচ্ছেন।

ওয়াশিংটন থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

পূর্ব ডিআর কঙ্গোর অস্থিতিশীল অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাই এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য। বৈদ্যুতিক গাড়িসহ আধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক খনিজই পাওয়া যায় এলাকাটিতে।

রুয়ান্ডার দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট পল কাগামে অশান্ত প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে বর্তমানে সংঘাতের মাঠে সামরিকভাবে স্পষ্ট এগিয়ে আছেন। ডিআর কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তশিসেকেদির সঙ্গে ট্রাম্পের যৌথ বৈঠক হবে নতুন নামে চালু হওয়া ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসে। সরকারি ব্যয় কমাতে প্রতিষ্ঠানটি ট্রাম্পই একসময় বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, দুই নেতা একটি শান্তিচুক্তি সই করবেন। পাঁচ মাস আগে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে আরেকটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন।

বৈঠকের আগের দিনও পূর্ব কঙ্গোতে তীব্র লড়াই চলেছে। রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র দল এম২৩ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় কঙ্গোর সরকারি বাহিনীর ওপর দাপট দেখিয়ে অবস্থান আরো মজবুত করেছে।

কাজিবার প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেনে চুবাকা কালেমবিরে জানান, ‘অনেক ঘরবাড়ি বোমায় ধ্বংস হয়েছে, বহু মানুষ নিহত হয়েছে।’

জানুয়ারির শেষের দিকে, এম২৩ গোমা ও বুকাভুর মতো  প্রধান নগরীগুলো দখল করায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নতুন করে উত্তেজিত হয়।

জুনের চুক্তির পর কাতারের মধ্যস্থতায় এম২৩ ও কিনশাসা সরকার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পরবর্তীতে উভয়পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তি ভাঙার অভিযোগ তোলে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ডিআর কঙ্গোসহ বহু সংঘাত তিনি বন্ধ করেছেন। দেশটি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে শত শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া যুদ্ধের মধ্যে ছিল।

এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোর খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এখানে প্রবেশ করতে না পারলে চীনসহ অন্য দেশ এই সম্পদে অনুপ্রবেশ করতে পারে।

বিশ্বের অধিকাংশ কোবাল্টের মজুত ডিআর কঙ্গোতে। কোবাল্ট বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির অন্যতম প্রধান উপাদান। পাশাপাশি তামাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ খনিজও রয়েছে সেখানে।

ডিআর কঙ্গো জানিয়েছে, ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তিতে শান্তি, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমন্বয় ও প্রাকৃতিক সম্পদে কৌশলগত অংশীদারিত্ব অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

কঙ্গোর প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র টিনা সালামা বলেন, অর্থনৈতিক ধাপের আগে শান্তি স্থাপন নিয়েই তাদের জোর ছিল।

তিনি আরো বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রে কাছে খনিজ বিক্রি করে দেওয়া নয়।‘ এটা খনিজের বিনিময়ে শান্তি এমন কথাও সত্য নয়।’

রুয়ান্ডা বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বন্ধের শর্ত হলো কঙ্গোকে অবশ্যই এফডিএলআরকে নিস্ক্রিয় করতে হবে। এফডিএলআর দলটি ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় জড়িত হুতু গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি সশস্ত্র সংগঠন।

গত সপ্তাহে কাগামে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, চুক্তি স্বাক্ষর বিলম্বিত করছে ডিআর কঙ্গো।

অন্যদিকে কঙ্গোর যোগাযোগমন্ত্রী প্যাট্রিক মুয়ায়া বলেন, মাঠের চলমান লড়াইই প্রমাণ করে রুয়ান্ডার সদিচ্ছা নেই।

তিনি বলেন, ‘এটাই দেখায়, রোয়ান্ডা এটা চায় না।’

উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অভিবাসন সংক্রান্ত আলোচনায় রয়েছে। ট্রাম্প ব্যাপক বহিষ্কার অভিযান চালাচ্ছেন। অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের অন্য দেশে পাঠানো তাঁর অগ্রাধিকার।

রুয়ান্ডা আগে ব্রিটেনের অভিবাসী গ্রহণ প্রকল্পে যুক্ত হয়েছিল। তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন।