Dhaka 11:14 pm, Friday, 21 November 2025

সালমান এফ রহমানের রাজনীতির শিকার নবাবগঞ্জের হতদরিদ্র ৩৪০ পরিবার

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:04:58 am, Thursday, 8 May 2025
  • 161 Time View

আমিনুর রহমান,(নবাবগঞ্জ)ঢাকা: অপরিকল্পিত প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা মুজিব বর্ষের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় করে গড়ে তোলা হয় হতদরিদ্রদের জন্য আবাসন। কিন্তু কোনো সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় ঘর বরাদ্ধ পাওয়া পরিবারগুলো পড়েছে বিপাকে। আবাসন প্রকল্প গুলোতে বসবাসরত বাসিন্দারা ঘর পেলেও কাজ না পেয়ে হাহাকার জীবন কাটছে। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর উত্তরপাড়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে এ দুটি আবাসন প্রকল্প। এখানে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করে।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের রাজনীতির শিকার হয়েছে এই এলাকার দারিদ্র পরিবারগুলো। নবাবগঞ্জে কোনো ভ‚মিহীন পরিবার নেই। শেখ হাসিনাকে এমন বার্তা দিয়ে খুশি করতেই তিনি উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবহার করে দূর্গম এলাকায় আবাসন গড়েছেন। ফলে তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে ভ‚মিহীনদের জন্য খাস জমি বন্দোবস্ত। স্থানীয় বাসিন্দা মো. পলাশ বলেন, ১৪টি ইউনিয়নে ভাগ স্ব স্ব এলাকার গরীব পরিবারকে এ ঘর দিলে জনপ্রতিনিধির সেবা পেতো। আবাসন এলাকার ভোটার না হওয়াতে অনেক সুবিধা থেকেই তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের দেয়া কোনো ত্রাণ সামগ্রীও তাঁরা পায়নি। ভিজিএফ, ভিজিডি, টিসিবির সব সুযোগ থেকেই বঞ্চিত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা শোল্লা ইউনিয়নের চর কোন্ডা এলাকার নদীর পাড় জুড়ে গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প-১। এখানে ২০০টি পরিবারের অবস্থান রয়েছে। এক দেড় কিলোমিটার পাশেই কৈলাইল ইউনিয়নের চর মাতাবপুর গ্রামে রয়েছে আরো ১৪০টি পরিবারের জন্য আবাসনের ঘর। নবাবগঞ্জ ও দোহারসহ আশপাশের উপজেলার ভ‚মিহীন পরিবারগুলো এখানে ঘর বরাদ্ধ পেয়ে ঠায় নিয়েছে। তবে নেই কেনো কর্মসংস্থান, চিকিৎসা সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা। শিশুদের জন্য স্কুল নেই, যাতায়াতের রাস্তা নেই। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে উপজেলা সদর ছাড়া চিকিৎসার সুযোগ নেই। পাচ্ছে না ইউনিয়ন পরিষদের উপকারভোগীর তালিকার কোনো সুবিধা। নানা সমস্যায় জর্জরিত এখানকার বাসিন্দারা। তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।

কাঠমিস্ত্রী নুরুল ইসলাম থাকেন আবাসন-১ এ বরাদ্ধ নেয়া ঘরে। পরিবার নিয়ে এখানেই থাকে। কিন্তু কাছে কোথাও কামকাজ নেই। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে কাজ করেন। যাতায়াত ভাড়াই সব শেষ হয়ে যায়। শুধু ঘর পেলেই তো হয় না কাজ করে তো খেতে হবে।

আবাসনের বাসিন্দা জুলহাস দেওয়ান বলেন, অসুস্থ ভারী কাজ করতে পারি না। ছোট্র চায়ের দোকান প্রতিদিন ২শ থেকে তিনশত টাকা বিক্রি হয় মাত্র। সংসার চলা দায়। সরকার কোনো সুযোগও দেয় না। এমনকি গরীবের জন ন্যায্য মূল্যের টিসিবির জিনিসও পায় না আবাসনের কেউ।

মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, শোল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় চেয়ারম্যান মেম্বাররা খোঁজ নেয় না। দ্রæত এখানে ভোটার করার দাবি জানান তিনি।

আবাসন-২ এর বাসিন্দা জাহিদা বেগম বলেন, সে আগলা ইউনিয়নের ভোটার। তাই কৈলাইলের কোনো ত্রাণ তাঁরা পায় না। তিনি আরো বলেন, এই আবাসনের ১৪০ টি পরিবারই গরীব। কেউ রিকশা চালায়, কেউ ভ্যান চালায়, কেউ মাটি কেটে জীবন চালায়। স্যার আমাগো কেউ একটা কাডও করে দেয় না।

আবাসনের বয়স ৩/৪ বছর পার হলেও এখনো বেশীর ভাগ লোক ঘরের দলিল বুঝে পাননি। মো. ইমান আলী ও সাথী আক্তার বলেন, ঘর বরাদ্ধের দলিল বুঝে না পেয়ে শংকায় আছি। তাঁদের অভিযোগ স্থানীয় রিমন স্যার নামে এক লোক এসে মাঝে মাঝেই তালাবদ্ধঘর পেলে টাকার বিনিময়ে নতুন লোক ঘরে তুলে দেয়। পুরনোদের তাড়িয়ে দেয়।

এ বিষয়ে রিমন রহমান বলেন, নবাবগঞ্জ ভ‚মি অফিসে খারিজ খাজনার কাজ করি অনেকদিন। আমি আবাসনের শুরু থেকেই এসিল্যান্ড স্যারদের অনুমতিতে দেখাশুনা করে আসছি। কিন্ত আমি কাউকে ঘর থেকে বের করে দেইনি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভ‚মি) আসিফ রহমান বলেন, আমার অফিস কাউকে এ দায়িত্ব দেয়নি। কেউ এ কাজ করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রকল্প নিয়ে আপাতত কিছু করার নেই। সরকার নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দিলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Mottakim Ahmed

Popular Post

সালমান এফ রহমানের রাজনীতির শিকার নবাবগঞ্জের হতদরিদ্র ৩৪০ পরিবার

Update Time : 07:04:58 am, Thursday, 8 May 2025

আমিনুর রহমান,(নবাবগঞ্জ)ঢাকা: অপরিকল্পিত প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা মুজিব বর্ষের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় করে গড়ে তোলা হয় হতদরিদ্রদের জন্য আবাসন। কিন্তু কোনো সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় ঘর বরাদ্ধ পাওয়া পরিবারগুলো পড়েছে বিপাকে। আবাসন প্রকল্প গুলোতে বসবাসরত বাসিন্দারা ঘর পেলেও কাজ না পেয়ে হাহাকার জীবন কাটছে। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর উত্তরপাড়ে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে এ দুটি আবাসন প্রকল্প। এখানে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করে।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের রাজনীতির শিকার হয়েছে এই এলাকার দারিদ্র পরিবারগুলো। নবাবগঞ্জে কোনো ভ‚মিহীন পরিবার নেই। শেখ হাসিনাকে এমন বার্তা দিয়ে খুশি করতেই তিনি উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবহার করে দূর্গম এলাকায় আবাসন গড়েছেন। ফলে তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে ভ‚মিহীনদের জন্য খাস জমি বন্দোবস্ত। স্থানীয় বাসিন্দা মো. পলাশ বলেন, ১৪টি ইউনিয়নে ভাগ স্ব স্ব এলাকার গরীব পরিবারকে এ ঘর দিলে জনপ্রতিনিধির সেবা পেতো। আবাসন এলাকার ভোটার না হওয়াতে অনেক সুবিধা থেকেই তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের দেয়া কোনো ত্রাণ সামগ্রীও তাঁরা পায়নি। ভিজিএফ, ভিজিডি, টিসিবির সব সুযোগ থেকেই বঞ্চিত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা শোল্লা ইউনিয়নের চর কোন্ডা এলাকার নদীর পাড় জুড়ে গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প-১। এখানে ২০০টি পরিবারের অবস্থান রয়েছে। এক দেড় কিলোমিটার পাশেই কৈলাইল ইউনিয়নের চর মাতাবপুর গ্রামে রয়েছে আরো ১৪০টি পরিবারের জন্য আবাসনের ঘর। নবাবগঞ্জ ও দোহারসহ আশপাশের উপজেলার ভ‚মিহীন পরিবারগুলো এখানে ঘর বরাদ্ধ পেয়ে ঠায় নিয়েছে। তবে নেই কেনো কর্মসংস্থান, চিকিৎসা সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা। শিশুদের জন্য স্কুল নেই, যাতায়াতের রাস্তা নেই। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে উপজেলা সদর ছাড়া চিকিৎসার সুযোগ নেই। পাচ্ছে না ইউনিয়ন পরিষদের উপকারভোগীর তালিকার কোনো সুবিধা। নানা সমস্যায় জর্জরিত এখানকার বাসিন্দারা। তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।

কাঠমিস্ত্রী নুরুল ইসলাম থাকেন আবাসন-১ এ বরাদ্ধ নেয়া ঘরে। পরিবার নিয়ে এখানেই থাকে। কিন্তু কাছে কোথাও কামকাজ নেই। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে কাজ করেন। যাতায়াত ভাড়াই সব শেষ হয়ে যায়। শুধু ঘর পেলেই তো হয় না কাজ করে তো খেতে হবে।

আবাসনের বাসিন্দা জুলহাস দেওয়ান বলেন, অসুস্থ ভারী কাজ করতে পারি না। ছোট্র চায়ের দোকান প্রতিদিন ২শ থেকে তিনশত টাকা বিক্রি হয় মাত্র। সংসার চলা দায়। সরকার কোনো সুযোগও দেয় না। এমনকি গরীবের জন ন্যায্য মূল্যের টিসিবির জিনিসও পায় না আবাসনের কেউ।

মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, শোল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় চেয়ারম্যান মেম্বাররা খোঁজ নেয় না। দ্রæত এখানে ভোটার করার দাবি জানান তিনি।

আবাসন-২ এর বাসিন্দা জাহিদা বেগম বলেন, সে আগলা ইউনিয়নের ভোটার। তাই কৈলাইলের কোনো ত্রাণ তাঁরা পায় না। তিনি আরো বলেন, এই আবাসনের ১৪০ টি পরিবারই গরীব। কেউ রিকশা চালায়, কেউ ভ্যান চালায়, কেউ মাটি কেটে জীবন চালায়। স্যার আমাগো কেউ একটা কাডও করে দেয় না।

আবাসনের বয়স ৩/৪ বছর পার হলেও এখনো বেশীর ভাগ লোক ঘরের দলিল বুঝে পাননি। মো. ইমান আলী ও সাথী আক্তার বলেন, ঘর বরাদ্ধের দলিল বুঝে না পেয়ে শংকায় আছি। তাঁদের অভিযোগ স্থানীয় রিমন স্যার নামে এক লোক এসে মাঝে মাঝেই তালাবদ্ধঘর পেলে টাকার বিনিময়ে নতুন লোক ঘরে তুলে দেয়। পুরনোদের তাড়িয়ে দেয়।

এ বিষয়ে রিমন রহমান বলেন, নবাবগঞ্জ ভ‚মি অফিসে খারিজ খাজনার কাজ করি অনেকদিন। আমি আবাসনের শুরু থেকেই এসিল্যান্ড স্যারদের অনুমতিতে দেখাশুনা করে আসছি। কিন্ত আমি কাউকে ঘর থেকে বের করে দেইনি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভ‚মি) আসিফ রহমান বলেন, আমার অফিস কাউকে এ দায়িত্ব দেয়নি। কেউ এ কাজ করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রকল্প নিয়ে আপাতত কিছু করার নেই। সরকার নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দিলে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।