Dhaka 6:56 pm, Wednesday, 26 November 2025

ভয়াল গণহত্যার ২৫ মার্চ আজ

Reporter Name
  • Update Time : 06:11:49 am, Tuesday, 25 March 2025
  • / 121 Time View

অগ্নিশিখা প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এক বিভীষিকাময় ‘কালরাত’ নেমে এসেছিল এ দেশের মানুষের জীবনে। মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মেতে ওঠে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে। আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস।২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ড ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কাপুরুষোচিত কলঙ্কজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনামাত্র। দিনটির স্মরণে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিটের জন্য ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকার ভাষ্যমতে, শুধু ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে। তাদের সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ সবই ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বর্ণিত সংজ্ঞায় গণহত্যার চূড়ান্ত উদাহরণ। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সে রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার হয় আরও ৩ হাজার লোক।’

সামরিক ভাষায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল পাকিস্তানি-হানাদারদের এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিল। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় বিভীষিকা ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ঢাকা শহরে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

এ বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল উন্মত্ত পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকাণ্ড। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ, করে অগ্নিসংযোগ। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এই রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। ২৫ মার্চের কালরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জোগায়।

কর্মসূচি : আজ সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে ২৫শে মার্চ কালরাতের শহিদদের স্মরণে আলোক প্রজ্বলন করা হবে। এ ছাড়া সকাল ১০টায় ছায়ানট মিলনায়তনে একক গান, সম্মেলক গান, পাঠ-আবৃত্তি ও নৃত্যালেখ্যর মধ্য দিয়ে শহিদদের স্মরণ করা হবে। বাংলা একাডেমি বিকাল ৩টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গণহত্যা দিবস স্মরণে সেমিনারের আয়োজন করেছে।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

10

ভয়াল গণহত্যার ২৫ মার্চ আজ

Update Time : 06:11:49 am, Tuesday, 25 March 2025

অগ্নিশিখা প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এক বিভীষিকাময় ‘কালরাত’ নেমে এসেছিল এ দেশের মানুষের জীবনে। মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মেতে ওঠে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে। আজ সেই ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস।২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ড ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কাপুরুষোচিত কলঙ্কজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনামাত্র। দিনটির স্মরণে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিটের জন্য ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকার ভাষ্যমতে, শুধু ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে। তাদের সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ সবই ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বর্ণিত সংজ্ঞায় গণহত্যার চূড়ান্ত উদাহরণ। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সে রাতে ৭ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার হয় আরও ৩ হাজার লোক।’

সামরিক ভাষায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত ছিল পাকিস্তানি-হানাদারদের এ হত্যা-অভিযান। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালি হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের পথেই এগিয়েছিল। অত্যাচার, উৎপীড়ন, পাশবিকতা, নৃশংসতা আর হিংস্রতার কালো থাবায় বিভীষিকা ছড়িয়ে দিয়েছিল পুরো ঢাকা শহরে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

এ বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল উন্মত্ত পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকাণ্ড। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ, করে অগ্নিসংযোগ। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এই রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। ২৫ মার্চের কালরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ভয়াবহ সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জোগায়।

কর্মসূচি : আজ সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে ২৫শে মার্চ কালরাতের শহিদদের স্মরণে আলোক প্রজ্বলন করা হবে। এ ছাড়া সকাল ১০টায় ছায়ানট মিলনায়তনে একক গান, সম্মেলক গান, পাঠ-আবৃত্তি ও নৃত্যালেখ্যর মধ্য দিয়ে শহিদদের স্মরণ করা হবে। বাংলা একাডেমি বিকাল ৩টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গণহত্যা দিবস স্মরণে সেমিনারের আয়োজন করেছে।