শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ :
নারায়ণগঞ্জে চাষাঢ়ায় ট্রাফিকের দায়ত্বে থাকা সেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘষে উভপক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত     নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের লাশ উদ্ধার সরাইল রাহমাতুল্লিল আলামীন দাখিল মাদ্রাসার নতুন কমিটি গঠিত মানুষকে হয়রানি মিথ্যা মামলা সহ সাংবাদিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ও এই শহীদ থেকে রেহাই পাইনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী শুটার মাসুদ বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেফতার  সরাইলের বিএনপির মানবতার নেতা ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী শিপন, সরাইলের বিদ্যুৎ নিয়ে শোনালেন আশার বাণী বিগত সরকারের আমলে ডিআইজি হাবিব এর সহযোগী এই শহীদ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পাঁচজন শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার  বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শুভ জম্মদিন পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে  জশনে জুলুস র‍্যালী বের হয় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাচঁপুরে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুনে বিস্ফোরণ, শিশুসহ একই পরিবারের দগ্ধ ৫

নবাবগঞ্জে দুইশত বছরের পেশা মৃৎশিল্প মৃতপ্রায়

আমিনুর রহমান,নবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আগের মতো কোলাহল নেই জালালচর পালপাড়ায়। প্রায় ২শত বছর আগের এ পেশা থেকে ছিটকে পড়ছে কুমার সম্প্রদায়। মৃৎশিল্প হারানোর সাথে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও কমেছে কর্মচাঞ্চল্যতা। অনেক শ্রমিক নিয়ে ইছামতির পাড় জুড়েই মাটির তৈরী আসবাবপত্র বানানোর কাজে ব্যস্ততা আর হইচই করে সময় কাটাতো পালপাড়ার বাসিন্দারা। সে দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। জালালচরের মতো পাশের আরো ৪/৫টি গ্রামেও মৃতপ্রায় এ শিল্পটি।

বৃহষ্পতিবার সরেজমিনে পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল, বক্সনগর ,গালিমপুর ইউনিয়নের পালপাড়ায় মাটির ঢিবিতে আগুনে খর পুড়িয়ে হাড়ি কলসী তৈরীর নিশানা চিহ্ন নেই। যেখানে এক সময় সকাল হতেই ধোয়ায় ছেয়ে যেতো পুরো আকাশ।গাছপালা গুলো দেখে মনে হতো কুয়াশাচ্ছন্ন।

জালালচর বড়পাল বাড়ি ঢুকতেই একটি ঝুড়িতে মাটির তৈরী বাসন নিয়ে এগিয়ে আসছেন পরান পাল। তিনি বলেন, কোথায় যান দাদা? থামেন। আমরা এখন আর এ কাজ করি না বললেই চলে। চোখে মুখে হতাশার ছাপ। অনেক কষ্ট হলো কথা বলাতে।

তিনি(পরানা পাল)বলেন, বাপ দাদার পূর্বপুরুষের আমলে প্রায় ২শ বছর আগে এই পল্লীতে মৃৎশিল্পের কাজ শুরু হয়। প্লাস্টিক মেলামাইনের কাছে আমরা হেরে গেছি দাদা। চাহিদা কমে গেছে। কিন্তু মাটির তৈরী জিনিসপত্র বানাতে খরচ বেশী। মৃৎশিল্প নেই বললেই চলে। এ মহল্লায় শতাধিক পরিবার এ কাজ করলেও এখন আছে মাত্র ৫ টি পরিবার। বাকিরা সব অন্য পেশায় চলে গেছে।

সাবেক স্কুল শিক্ষক হরিদাশ পাল (৮০) বলেন, মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। লাকরি ও শ্রমের দাম বেশী। সেই তুলনায় লাভ হয় না। তাছাড়া এখন আর আমাদের ছেলে নাতিরা এ কাজ করতে চায় না। আধুনিকতায় সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বৃটিশ আমলে শুরু হয় এ ব্যবসা। এক সময় কমপক্ষে হাজারো লোক কাজ করতো এই ইছামতীর পারে। এখন খুঁজলেও পাওয়া যায় না। মাটির তৈরী জিনিসপত্রের যখন কদর ছিলো তখন এ অঞ্চলের মুসলিমরাও শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো।

মৃৎশিল্পী ধীরেন পাল বলেন, ৩৫ বছর ধরে এ শিল্পের কারিগর হিসেবে কাজ করেন। কোনো সরকারই আমাগো অনুদান দেয়নি। বছরের পর বছর কাজ করি খবরও নেয়না। ছেলে মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অনেক বাবা মাকে আর এ কাজ করতে দেয় না। অনেকে বিদেশে গেছে, কেউ নৌকা চালায়, রিকসা চালায়, বাজারে সবজি বিক্রি করে, চায়ের দোকান করে। মাটির মটকা তৈরীর কাজ ব্যস্ত ধীরেন এভাবেই কথা বলছিলেন।

মাটির তৈরী বাসন শুকাতে ব্যস্ত শচি রানী পাল বলেন, বাবারে এখন ভালো লাগে না। জম্মের পর হতেই কাজ করতেছি। ২০ বছর আগেও ১০০/১৫০ টাকায় কাজ করানো যেত। এখন দুইবেলা খাবারসহ ৭০০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু সেই হিসেবে দাম নেই।
হরিশক‚ল নদীর পাড়ে দুটি নৌকা বোঝাই করে মাটির তৈরী হাতানী, পিঠার সাজ, মুড়ির ঝাঁঝর, কলসি, বাসন, হাঁড়ি নিয়ে শিববাড়ী মেলায় যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিতাই পাল। তিনি বলেন, এক সময় সারা বছর জুড়েই এ নদী দিয়ে নৌকায় করে হাড়ি পাতিল বিক্রি করতাম বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। এখন মেলা বাণিজ্য আইলে কিছু বিক্রি হয়।

প্রায় ৫০ বছর ধরে মাটির তৈরী জিনিস উৎপাদন করেন পরিতোষ পাল (৭০)। চ্যাপা মাছের মটকা ও হাড়ি তৈরী করেন। চ্যাপা মাছের হাড়ি ও মটকা ৩০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কিন্তু এতে খরচ উঠে না। আগের তুলনায় রান্নার কাজে মাটির জিনিস আর ব্যবহার হয় না। তাই অনেকেই এ ব্যবসা করতে আগ্রহী না। আমিও ছেড়ে দিবো এ কাজ।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম বলেন, আমি কয়েকটি মহল্লায় গিয়েছি মাটির জিনিস তৈরী দেখতে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগ থাকতে হবে। ভোক্তা যদি দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্লাষ্টিক মেলামাইন কমিয়ে মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার করে তাহলে চাহিদা থাকবে। সেই ক্ষেত্রে কুমার সম্প্রদায় আবার ঘুরে দাড়াবে।

খবরটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com