Dhaka 5:37 pm, Tuesday, 30 December 2025

ঢাবিতে আবার ‘কোটা না মেধা’ স্লোগান, বিক্ষোভ

Reporter Name
  • Update Time : 09:10:50 am, Monday, 20 January 2025
  • / 287 Time View
১৩৩

অগ্নিশিখা প্রতিবেদকঃ জুলাইয়ে কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরও এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা-মেধা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘মেডিকেলে কোটা কেন? প্রশাসন জবাব দে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘অন্যায় হবে যতবার জেগে উঠবো ততবার’, ‘লড়াই লড়াই চাই’, ‘এই লড়াইয়ে জিতবে কারা? ২৪ এর সৈনিকরা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধীতা করে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও এমন স্লোগান দেওয়া হত।

সেই আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের এক দফায় রূপ নিলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে টানা ১৫ বছরের শাসন শেষ হয় শেখ হাসিনার।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এক কঠিন গণ-আন্দোলনের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচার পতনের ইতিহাস লেখেছি। মনে রাখতে হবে, এই কোটা আন্দোলনের মাধ্যমেই সেই গণ-আন্দোলনের শুরু। কিন্তু বর্তমান সরকারের ৬ মাস হয়ে গেলেও এখনো কোটা প্রথার বিলুপ্তি দেখতে পাইনি। এখনো কেউ কোটার জোরে ৪১ পেয়ে চান্স পায়, আরেকজন ৭৩ পেয়েও চান্স পায় না। যেই বৈষম্য নিরসন করতে গিয়ে আমাদের রাজপথে নামতে হয়েছিল সেই বৈষম্য দূর করতে যদি আবারও নামতে হয়, তাহলে এই সরকারেরও পরিণতি হাসিনার মতো হবে।

তারা আরও বলেন, আমাদের ভাইরা যে বৈষম্য দূর করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই বৈষম্য এখনো থাকা মানে তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। আমরা এটি সহ্য করবো না। অবিলম্বে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে সব চাকরি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে।

এর আগে, রাত ১০টায় ঢাকা কলেজ হল পাড়া থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সাইন্সল্যাবে যায়। এরপর সাইন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

রোববার মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে ৩৭টি সরকারি কলেজের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৭২ জন।

পরে রাতে মেডিকেলের ভর্তির ফলাফল তৈরিতে কোটা রাখার বিরোধিতা করে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য কোটা’ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মধ্যরাতে বিক্ষোভের পর তারা শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেন। এতে তারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে সেটি বাতিল করে নতুন করে আবারও ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী আসিফ খান বলেন, যে কোটার জন্য দুই হাজারেরও অধিক মানুষ জীবন দিয়েছে, যে কোটার জন্য হাজার হাজার মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে সেই কোটা এখনো বহাল আছে। এর চেয়ে নিন্দনীয় ঘটনা আর কী হতে পারে।

কোটার বিরোধিতা করে রাতে বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কোটা প্রথার পতন হয়েছে কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যে কোটা ব্যবস্থা আমরা দেখলাম এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।

সূত্র: যুগান্তর

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ঢাবিতে আবার ‘কোটা না মেধা’ স্লোগান, বিক্ষোভ

Update Time : 09:10:50 am, Monday, 20 January 2025
১৩৩

অগ্নিশিখা প্রতিবেদকঃ জুলাইয়ে কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরও এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা ‘কোটা না মেধা, মেধা-মেধা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘মেডিকেলে কোটা কেন? প্রশাসন জবাব দে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘অন্যায় হবে যতবার জেগে উঠবো ততবার’, ‘লড়াই লড়াই চাই’, ‘এই লড়াইয়ে জিতবে কারা? ২৪ এর সৈনিকরা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধীতা করে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও এমন স্লোগান দেওয়া হত।

সেই আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের এক দফায় রূপ নিলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে টানা ১৫ বছরের শাসন শেষ হয় শেখ হাসিনার।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এক কঠিন গণ-আন্দোলনের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচার পতনের ইতিহাস লেখেছি। মনে রাখতে হবে, এই কোটা আন্দোলনের মাধ্যমেই সেই গণ-আন্দোলনের শুরু। কিন্তু বর্তমান সরকারের ৬ মাস হয়ে গেলেও এখনো কোটা প্রথার বিলুপ্তি দেখতে পাইনি। এখনো কেউ কোটার জোরে ৪১ পেয়ে চান্স পায়, আরেকজন ৭৩ পেয়েও চান্স পায় না। যেই বৈষম্য নিরসন করতে গিয়ে আমাদের রাজপথে নামতে হয়েছিল সেই বৈষম্য দূর করতে যদি আবারও নামতে হয়, তাহলে এই সরকারেরও পরিণতি হাসিনার মতো হবে।

তারা আরও বলেন, আমাদের ভাইরা যে বৈষম্য দূর করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই বৈষম্য এখনো থাকা মানে তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। আমরা এটি সহ্য করবো না। অবিলম্বে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে সব চাকরি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে।

এর আগে, রাত ১০টায় ঢাকা কলেজ হল পাড়া থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সাইন্সল্যাবে যায়। এরপর সাইন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

রোববার মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে ৩৭টি সরকারি কলেজের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৭২ জন।

পরে রাতে মেডিকেলের ভর্তির ফলাফল তৈরিতে কোটা রাখার বিরোধিতা করে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ অন্যান্য কোটা’ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মধ্যরাতে বিক্ষোভের পর তারা শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করেন। এতে তারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে সেটি বাতিল করে নতুন করে আবারও ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী আসিফ খান বলেন, যে কোটার জন্য দুই হাজারেরও অধিক মানুষ জীবন দিয়েছে, যে কোটার জন্য হাজার হাজার মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে সেই কোটা এখনো বহাল আছে। এর চেয়ে নিন্দনীয় ঘটনা আর কী হতে পারে।

কোটার বিরোধিতা করে রাতে বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কোটা প্রথার পতন হয়েছে কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যে কোটা ব্যবস্থা আমরা দেখলাম এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।

সূত্র: যুগান্তর