Dhaka 4:15 am, Monday, 8 December 2025

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগরে রাত হলেই শুরু হয় ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

Reporter Name
  • Update Time : 12:59:21 pm, Tuesday, 3 December 2024
  • / 171 Time View
২০

ওমর, সিলেট বিভাগীয় ব্যূরো চীফঃ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটাসহ জমি ভরাট কাজে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নির্বিকার ভ‚মিকায় মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।

জানা গেছে, এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষিজমি তিন ফসলি। এখানে ধান চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকদের থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, উপজেলায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এরা দরিদ্র কৃষককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে নগদ অর্থ পেতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে।

এসব জমিতে ফসল বা মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রলি গাড়ি। এসব ট্রলির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তাঘাটে খানাখন্দ তৈরি হয়ে দ্রæত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রলি চলাচলের কারণে আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, বুধন্তি, ইছাপুরা, হরষপুর ও চম্পকনগর ইউনিয়নের শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র রাতের বেলা এক্সক্যাভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটছেন। কেটে নেওয়া মাটি ট্রলিতে করে কাছের ইটভাটায় পাঠানো হচ্ছে। রাত হলেই ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।মোঃ শামীম মিয়া নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, ট্রাকের বিকট আওয়াজে এলাকাবাসী রাতে ঘুমাতে পারে না। শিক্ষার্থীরা তাদের লেখা পড়া করতে পারে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মির্জাপুর- হরষপুর রাস্তায় প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে এসব মাটি কাটার গাড়ি চলছে। এসব মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার খবর পেলেই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান ও আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগরে রাত হলেই শুরু হয় ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব

Update Time : 12:59:21 pm, Tuesday, 3 December 2024
২০

ওমর, সিলেট বিভাগীয় ব্যূরো চীফঃ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটাসহ জমি ভরাট কাজে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নির্বিকার ভ‚মিকায় মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।

জানা গেছে, এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষিজমি তিন ফসলি। এখানে ধান চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকদের থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, উপজেলায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এরা দরিদ্র কৃষককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে নগদ অর্থ পেতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে।

এসব জমিতে ফসল বা মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রলি গাড়ি। এসব ট্রলির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তাঘাটে খানাখন্দ তৈরি হয়ে দ্রæত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রলি চলাচলের কারণে আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, বুধন্তি, ইছাপুরা, হরষপুর ও চম্পকনগর ইউনিয়নের শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র রাতের বেলা এক্সক্যাভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটছেন। কেটে নেওয়া মাটি ট্রলিতে করে কাছের ইটভাটায় পাঠানো হচ্ছে। রাত হলেই ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার হিড়িক দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।মোঃ শামীম মিয়া নামে একজন ব্যবসায়ী জানান, ট্রাকের বিকট আওয়াজে এলাকাবাসী রাতে ঘুমাতে পারে না। শিক্ষার্থীরা তাদের লেখা পড়া করতে পারে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মির্জাপুর- হরষপুর রাস্তায় প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে এসব মাটি কাটার গাড়ি চলছে। এসব মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার খবর পেলেই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান ও আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোষীদের অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।