Dhaka 1:41 pm, Friday, 5 December 2025

আড়তের ভেতরে ডিম, বাইরে বন্ধপর্যাপ্ত ডিমের মজুদ থাকার পরও এভাবে কৃত্রিম সংকট

Reporter Name
  • Update Time : 10:56:38 am, Tuesday, 15 October 2024
  • / 228 Time View
১৭

মাসুদ পারভেজ, বিভাগীয় ব্যুরো চট্রগামঃ কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র যারা বাড়তি দামে ডিম নিতে চায় শুধু তাদের জন্য আড়ত খোলে পাহাড়তলীতে এক আড়তে অভিযান, লাখ টাকা জরিমানা

আড়তের ভেতরে লাখ লাখ ডিমের মজুদ। বাইরে থেকে আড়ত বন্ধ। নগরীর পাহাড়তলী বাজার এবং স্টেশন রোড এলাকায় ডিমের আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত ডিমের মজুদ থাকার পরও এভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ডিমের অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ডিমের সবচেয়ে বড় আড়তগুলো পাহাড়তলী বাজার, স্টেশন রোড (পুরাতন রেল স্টেশন) ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায়। গত ১৫ দিনে ডিমের বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মুষ্টিমেয় আড়তদার বাজারে ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে প্রতিটি ডিমের ওপর ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অভিযানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এদিকে সরকারি দামে ডিম কিনতে না পারা, রশিদ না দেওয়া, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন কিছু আড়তদার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাহাড়তলী ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর লিটন। তিনি জানান, গতকাল (রোববার) আমাদের ডিম কিনতে হয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সায়। সরকার নির্ধারিত দাম ১১ টাকা ০১ পয়সা। এছাড়া যাদের কাছ থেকে ডিম কিনছি তারা রশিদ দিচ্ছে না। হয়রানি থেকে বাঁচতে আজ (সোমবার) থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি। সরকারি দামে কিনতে পারলে তখন আড়তে ডিম বেচব।

পাহাড়তলী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জামসেদ গতকাল বলেন, গত এক মাস আগে আমরা প্রতি ডজন ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। ১৫ দিনের মাথায় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায়। আমরা আড়তদারদের কাছ থেকে নিই। আমাদের কাছ থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকার মুদির দোকানদাররা নিয়ে বিক্রি করেন। তারা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে ক্রেতাদের কাছে ১৮০ টাকায় বিক্রি করেন। আড়তদাররা ডিমের বাজারে সংকট সৃষ্টি করে এক লাফে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বাড়তি দামে নেওয়ার জন্য ডিম মজুত রেখে সংকট সৃষ্টি করছেন।

নগরীর লাভলেইন এলাকার মুদির দোকানদার কিরন বড়ুয়া জানান, এখন এক ডজন ডিম ১৮০ টাকা। আমরা এক মাস আগে প্রতি ডজন ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। এক ডজন বিক্রি করলে ৬ টাকা পাই। আড়তদাররা ডিমের দাম সীমাহীন বাড়িয়ে দিয়েছেন।

পাহাড়তলী বাজারে গতকাল একটি ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। অভিযানের সময় বাজারের সব ডিমের আড়ত বন্ধ ছিল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা মেসার্স জৈনপুরী ট্রেডার্স নামে একটি ডিমের আড়ত খুলে ভেতরে অভিযান চালান। এ সময় দেখা যায় ভেতরে এক লাখের বেশি ডিম মজুদ রয়েছে। ভেতরে ডিম রেখে বাইরে থেকে আড়ত বন্ধ করে রাখায় এবং নিজেদের মতো করে বিল ভাউচার তৈরি করে অধিক দামে ডিম বিক্রি করছে। আড়ত বন্ধ রাখে। যারা তাদের কাছ থেকে বাড়তি দামে ডিম নিতে চায় আড়ত খুলে শুধুমাত্র তাদেরকে ডিম সরবরাহ করছে।

ডিমের বাজারের এমন চিত্র শুধু পাহাড়তলী বাজারের জৈনপুরী ট্রেডার্সে নয়; সবগুলো আড়তের। তারা এক দামে ডিম কিনে নিজেদের মতো করে বিল–ভাউচার বানায় বলে জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রানা দেবনাথ বলেন, পাহাড়তলী বাজারে ডিমের আড়তগুলোর ভেতরে ডিম মজুত রেখে বাইরে বন্ধ করে রেখেছেন আড়তদাররা। তারা ডিমের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটটি অতি মুনাফা লাভের জন্য বাজারে ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। আজকে (গতকাল) আমরা পাহাড়তলী বাজারে মেসার্স জৈনপুরী ট্রেডার্স নামে একটি ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়েছি। এই আড়তটি বাইরে থেকে বন্ধ ছিল, কিন্তু ভেতরে এক লাখের বেশি ডিম ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আলাউদ্দিন। তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছি। আড়তদাররা নিজেদের মতো করে বিল–ভাউচার বানাচ্ছেন। পাহাড়তলী বাজারে আড়তগুলোতে ডিমের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। অভিযানের খবর পেয়ে তারা আগে থেকেই বন্ধ করে চলে যান। আজকে আমরা একটি আড়তে অভিযান চালিয়েছি।

কাল–পরশু আবার অভিযান চালানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পূজার আগেও আমরা একটি আড়তে অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করছি। ওই আড়তে দেড় লাখের মতো ডিমের মজুত ছিল। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আড়তের ভেতরে ডিম, বাইরে বন্ধপর্যাপ্ত ডিমের মজুদ থাকার পরও এভাবে কৃত্রিম সংকট

Update Time : 10:56:38 am, Tuesday, 15 October 2024
১৭

মাসুদ পারভেজ, বিভাগীয় ব্যুরো চট্রগামঃ কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র যারা বাড়তি দামে ডিম নিতে চায় শুধু তাদের জন্য আড়ত খোলে পাহাড়তলীতে এক আড়তে অভিযান, লাখ টাকা জরিমানা

আড়তের ভেতরে লাখ লাখ ডিমের মজুদ। বাইরে থেকে আড়ত বন্ধ। নগরীর পাহাড়তলী বাজার এবং স্টেশন রোড এলাকায় ডিমের আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত ডিমের মজুদ থাকার পরও এভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ডিমের অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ডিমের সবচেয়ে বড় আড়তগুলো পাহাড়তলী বাজার, স্টেশন রোড (পুরাতন রেল স্টেশন) ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায়। গত ১৫ দিনে ডিমের বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মুষ্টিমেয় আড়তদার বাজারে ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে প্রতিটি ডিমের ওপর ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অভিযানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এদিকে সরকারি দামে ডিম কিনতে না পারা, রশিদ না দেওয়া, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানার কারণে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন কিছু আড়তদার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাহাড়তলী ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর লিটন। তিনি জানান, গতকাল (রোববার) আমাদের ডিম কিনতে হয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সায়। সরকার নির্ধারিত দাম ১১ টাকা ০১ পয়সা। এছাড়া যাদের কাছ থেকে ডিম কিনছি তারা রশিদ দিচ্ছে না। হয়রানি থেকে বাঁচতে আজ (সোমবার) থেকে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি। সরকারি দামে কিনতে পারলে তখন আড়তে ডিম বেচব।

পাহাড়তলী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জামসেদ গতকাল বলেন, গত এক মাস আগে আমরা প্রতি ডজন ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। ১৫ দিনের মাথায় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায়। আমরা আড়তদারদের কাছ থেকে নিই। আমাদের কাছ থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকার মুদির দোকানদাররা নিয়ে বিক্রি করেন। তারা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে ক্রেতাদের কাছে ১৮০ টাকায় বিক্রি করেন। আড়তদাররা ডিমের বাজারে সংকট সৃষ্টি করে এক লাফে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বাড়তি দামে নেওয়ার জন্য ডিম মজুত রেখে সংকট সৃষ্টি করছেন।

নগরীর লাভলেইন এলাকার মুদির দোকানদার কিরন বড়ুয়া জানান, এখন এক ডজন ডিম ১৮০ টাকা। আমরা এক মাস আগে প্রতি ডজন ১৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। এক ডজন বিক্রি করলে ৬ টাকা পাই। আড়তদাররা ডিমের দাম সীমাহীন বাড়িয়ে দিয়েছেন।

পাহাড়তলী বাজারে গতকাল একটি ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম। অভিযানের সময় বাজারের সব ডিমের আড়ত বন্ধ ছিল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা মেসার্স জৈনপুরী ট্রেডার্স নামে একটি ডিমের আড়ত খুলে ভেতরে অভিযান চালান। এ সময় দেখা যায় ভেতরে এক লাখের বেশি ডিম মজুদ রয়েছে। ভেতরে ডিম রেখে বাইরে থেকে আড়ত বন্ধ করে রাখায় এবং নিজেদের মতো করে বিল ভাউচার তৈরি করে অধিক দামে ডিম বিক্রি করছে। আড়ত বন্ধ রাখে। যারা তাদের কাছ থেকে বাড়তি দামে ডিম নিতে চায় আড়ত খুলে শুধুমাত্র তাদেরকে ডিম সরবরাহ করছে।

ডিমের বাজারের এমন চিত্র শুধু পাহাড়তলী বাজারের জৈনপুরী ট্রেডার্সে নয়; সবগুলো আড়তের। তারা এক দামে ডিম কিনে নিজেদের মতো করে বিল–ভাউচার বানায় বলে জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রানা দেবনাথ বলেন, পাহাড়তলী বাজারে ডিমের আড়তগুলোর ভেতরে ডিম মজুত রেখে বাইরে বন্ধ করে রেখেছেন আড়তদাররা। তারা ডিমের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। এই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটটি অতি মুনাফা লাভের জন্য বাজারে ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। আজকে (গতকাল) আমরা পাহাড়তলী বাজারে মেসার্স জৈনপুরী ট্রেডার্স নামে একটি ডিমের আড়তে অভিযান চালিয়েছি। এই আড়তটি বাইরে থেকে বন্ধ ছিল, কিন্তু ভেতরে এক লাখের বেশি ডিম ছিল। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আলাউদ্দিন। তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছি। আড়তদাররা নিজেদের মতো করে বিল–ভাউচার বানাচ্ছেন। পাহাড়তলী বাজারে আড়তগুলোতে ডিমের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। অভিযানের খবর পেয়ে তারা আগে থেকেই বন্ধ করে চলে যান। আজকে আমরা একটি আড়তে অভিযান চালিয়েছি।

কাল–পরশু আবার অভিযান চালানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পূজার আগেও আমরা একটি আড়তে অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করছি। ওই আড়তে দেড় লাখের মতো ডিমের মজুত ছিল। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলবে।