Dhaka 6:10 am, Friday, 26 December 2025

ভরা মৌসুমেও বেতাগীতে চাহিদার তুলনায় ইলিশ কম, দাম চড়া

Reporter Name
  • Update Time : 10:25:42 am, Thursday, 3 October 2024
  • / 252 Time View
৫০

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও বরগুনার বেতাগীতে মিলছে না তেমন ইলিশ মাছ। ফলে মাছের বাজারে চলছে ইলিশের আকাল।বিষখালী নদীতে পানি থইথই করলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না আশানুরূপ ইলিশ। দু:শ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। অথচ এ সময়ে ইলিশ মাছে বাজারগুলো ভরা থাকার কথা, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বাজারে সামান্য পরিমাণ যে ইলিশ মিলছে, তার দাম নাগালের বাইরে।

উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, দেড় লক্ষাধিক অত্যুষিত জনসংখ্যার বেতাগী উপজেলায় ৩ হাজার ৪ শ জেলে রয়েছে। এরমধ্যে নদীতে সরাসরি ইলিশ মাছ ধরা এবং বিক্রি করার কাজে ৮ শ জেলে জড়িত রয়েছে।উপজেলার বিষখালী নদীর তীরে বেতাগী বন্দর, ঝোপখালী, ফুলতলা, কেওড়াবুনিয়া, ছোট মোকামিয়া, মোকামিয়া, চরখালী, গ্রামার্দ্দন, বদনীখালী, তালবাড়ি, কালিকাবাড়ি ও আলীয়াবাদে শত শত জেলে জড়িত আছেন ইলিশ ধরার কাজে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এইসব প্রান্তিক জেলেরা বিষখালী নদীতে জাল ফেললেও মিলছে না তেমন ইলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, বৃষ্টিপাত ও নদীতে পানি বাড়লে সাগর থেকে নদীতে মাছ চলে আসে। এ সময় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। এ ছাড়া কয়েক দিন ধরে বন্যায় নদীর পানি বেড়েছে। ফলে বিষখালী নদীতে এখন পানি থইথই করছে। তবুও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে তারা দিনরাত নিয়মিত জাল ফেলছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ইলিশ না পেয়ে তাদের অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের জেলে আব্দুল জলিল বলেন , জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন, এখন ভাদ্র পেরিয়েও ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু বিষখালী নদীতে হন্য হয়ে ঘুরেও মাছের দেখা পাচ্ছেন না। পানি বাড়লেও ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। ‘

গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত সরেজমিনে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বেতাগী পৌর শহরের টাউনব্রিজ বাজারে বলতে গেলে প্রায় ইলিশশূন্য। এ বাজারের ইলিশ বিক্রেতা, সুনীল হাওলাদার ও জাকির হোসেন বলেন, মৌসুমের এই সময়টায় প্রচুর ইলিশের সমাগম হতো। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় পা ফেলার জায়গা থাকত না। মণে মণে ইলিশ বেচাকেনা হতো। কিন্তু পৌর এলাকার জনসংখ্যা ও চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছ উঠেছে খুবই কম। যা-ও উঠছে তা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী আলম হাওলাদার বলেন, এখানকার স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।

উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, বিষখালী নদীতে আগে অনেক ইলিশ পাওয়া যেত। এখন ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল, তাই জেলেদের দুর্দিন চলছে। পরিবাব-পরিজন নিয়ে অনেক জেলেকে অনাহারে থাকতে হচ্ছে। নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে সাগর থেকে মাছ আসছে না।

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, প্রকৃতিকভাবে উৎপাদিত ইলিশের এত দাম হবে কেন? তাই ইলিশের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং জোড়ালো করা আবাশ্যক। ইলিশের ভলা মৌসুমেও ভোক্তাদের ইলিশ ক্রয় করতে না পারা দুঃখজনক।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান লোকমান আলী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে ডুবোচর জেগেছে। নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রজননের সময় মিঠা পানিতে চলে আসে ইলিশ মাছ। কিন্তু ডুবোচরের পাশাপাশি বিভিন্ন পদার্থের কারণে দিন দিন নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। প্রজননের সময় আসতে না পাড়ায় দিন দিন ইলিশের সংখ্যা কমছে।

বরগুনা জেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মাহামুদুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেও এখানে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু নদীতে অসংখ্য ডুবোচর পড়ায় উপকূলীয় এ এলাকায় এখন আর ইলিশ দেখা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে নাব্যতা সংকটও দেখা দিয়েছে। তাই বিষখালী নদীতে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে ইলিশ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভরা মৌসুমেও বেতাগীতে চাহিদার তুলনায় ইলিশ কম, দাম চড়া

Update Time : 10:25:42 am, Thursday, 3 October 2024
৫০

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও বরগুনার বেতাগীতে মিলছে না তেমন ইলিশ মাছ। ফলে মাছের বাজারে চলছে ইলিশের আকাল।বিষখালী নদীতে পানি থইথই করলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না আশানুরূপ ইলিশ। দু:শ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। অথচ এ সময়ে ইলিশ মাছে বাজারগুলো ভরা থাকার কথা, কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বাজারে সামান্য পরিমাণ যে ইলিশ মিলছে, তার দাম নাগালের বাইরে।

উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, দেড় লক্ষাধিক অত্যুষিত জনসংখ্যার বেতাগী উপজেলায় ৩ হাজার ৪ শ জেলে রয়েছে। এরমধ্যে নদীতে সরাসরি ইলিশ মাছ ধরা এবং বিক্রি করার কাজে ৮ শ জেলে জড়িত রয়েছে।উপজেলার বিষখালী নদীর তীরে বেতাগী বন্দর, ঝোপখালী, ফুলতলা, কেওড়াবুনিয়া, ছোট মোকামিয়া, মোকামিয়া, চরখালী, গ্রামার্দ্দন, বদনীখালী, তালবাড়ি, কালিকাবাড়ি ও আলীয়াবাদে শত শত জেলে জড়িত আছেন ইলিশ ধরার কাজে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এইসব প্রান্তিক জেলেরা বিষখালী নদীতে জাল ফেললেও মিলছে না তেমন ইলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, বৃষ্টিপাত ও নদীতে পানি বাড়লে সাগর থেকে নদীতে মাছ চলে আসে। এ সময় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। এ ছাড়া কয়েক দিন ধরে বন্যায় নদীর পানি বেড়েছে। ফলে বিষখালী নদীতে এখন পানি থইথই করছে। তবুও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে তারা দিনরাত নিয়মিত জাল ফেলছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ইলিশ না পেয়ে তাদের অনেককেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের জেলে আব্দুল জলিল বলেন , জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন, এখন ভাদ্র পেরিয়েও ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু বিষখালী নদীতে হন্য হয়ে ঘুরেও মাছের দেখা পাচ্ছেন না। পানি বাড়লেও ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। ‘

গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত সরেজমিনে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বেতাগী পৌর শহরের টাউনব্রিজ বাজারে বলতে গেলে প্রায় ইলিশশূন্য। এ বাজারের ইলিশ বিক্রেতা, সুনীল হাওলাদার ও জাকির হোসেন বলেন, মৌসুমের এই সময়টায় প্রচুর ইলিশের সমাগম হতো। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় পা ফেলার জায়গা থাকত না। মণে মণে ইলিশ বেচাকেনা হতো। কিন্তু পৌর এলাকার জনসংখ্যা ও চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছ উঠেছে খুবই কম। যা-ও উঠছে তা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী আলম হাওলাদার বলেন, এখানকার স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।

উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, বিষখালী নদীতে আগে অনেক ইলিশ পাওয়া যেত। এখন ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল, তাই জেলেদের দুর্দিন চলছে। পরিবাব-পরিজন নিয়ে অনেক জেলেকে অনাহারে থাকতে হচ্ছে। নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটের কারণে সাগর থেকে মাছ আসছে না।

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, প্রকৃতিকভাবে উৎপাদিত ইলিশের এত দাম হবে কেন? তাই ইলিশের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে বাজার মনিটরিং জোড়ালো করা আবাশ্যক। ইলিশের ভলা মৌসুমেও ভোক্তাদের ইলিশ ক্রয় করতে না পারা দুঃখজনক।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান লোকমান আলী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে ডুবোচর জেগেছে। নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রজননের সময় মিঠা পানিতে চলে আসে ইলিশ মাছ। কিন্তু ডুবোচরের পাশাপাশি বিভিন্ন পদার্থের কারণে দিন দিন নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। প্রজননের সময় আসতে না পাড়ায় দিন দিন ইলিশের সংখ্যা কমছে।

বরগুনা জেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মাহামুদুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেও এখানে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু নদীতে অসংখ্য ডুবোচর পড়ায় উপকূলীয় এ এলাকায় এখন আর ইলিশ দেখা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে নাব্যতা সংকটও দেখা দিয়েছে। তাই বিষখালী নদীতে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে ইলিশ।