Dhaka 1:46 am, Monday, 8 December 2025

কর্ণফুলীতে বর্জ্য পড়া ঠেকাতে খালের মুখে বসবে জাল

Reporter Name
  • Update Time : 09:11:18 am, Thursday, 9 May 2024
  • / 279 Time View
২৫
মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরোচীফ
চট্টগ্রাম: নগরের স্যুয়ারেজ, গৃহস্থালি, শিল্প-কারখানাসহ সব খাতের কঠিন বর্জ্য খাল বেয়ে সোজা পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। ফলে একদিকে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে নদীর তলদেশ, পাড় ভরাট হয়ে প্রশস্ততা কমছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে খালগুলোর মুখে নেটিং করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটি হলে নদী সুরক্ষায় জাদুকরী প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, ককসিট, প্লাস্টিক বোতল, কৌটা, পলিথিনসহ বিচিত্র সব বর্জ্যের ছড়াছড়ি। নৌযান থেকে বের হওয়া বেশ পোড়াতেল ভাসছে।
দিনের দুইবার করে জোয়ার-ভাটা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়মিত খনন, নদীশাসনের কারণে কর্ণফুলী মারা না গেলেও ক্রমাগত দখলে দূষণে বিপর্যস্ত, মুমূর্ষু অবস্থা।
কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা মো. লোকমান  বলেন, কর্ণফুলী শুধু একটি নদী নয়।
এ নদীর উজানে হালদা নদী। চট্টগ্রাম ওয়াসা হালদা ও কর্ণফুলীর পানি সরবরাহ করে শহরের অর্ধকোটি মানুষের বাসাবাড়িতে। অপচনশীল কঠিন বর্জ্য, অপ্রতিরোধ্য গতির দখল, ভয়াবহ দূষণে নদী ভরাট হলে জোয়ারে লবণাক্ত পানি উজানে চলে যাবে। তখন যে কী হবে তার নমুনা সম্প্রতি নগরবাসী দেখেছেন। এ নদীর দুই পাড়ে যে লাখো মানুষের বসবাস, জীবিকা তাদের কী হবে! নদীই যদি না বাঁচে তাহলে বন্দর বাঁচবে? আমরা বাঁচবো? তাই যেকোনো মূল্যে প্রাকৃতিক সম্পদ কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে। শুনেছি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খালের মুখে নেটিং করে দেবে। এটি হলে কঠিন বর্জ্য নদীতে পড়বে না, খালেই আটকে যাবে।
কর্ণফুলী নদী গবেষক অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খালের মুখে জাল বসালে নিঃসন্দেহে বর্জ্য আটকাবে। কোন ধরনের জাল, জালের ছিদ্রের আকার কেমন হবে? সেই বর্জ্য অপসারণ করবে কারা, কীভাবে? সত্যি কথা হচ্ছে দেহের ক্যান্সার সেল যেমন সব উপড়ে ফেলতে হয় তেমনি নদী বাঁচাতে দূষণের সব পথ বন্ধ করে দিতে হবে। খাল দিয়ে কঠিন বর্জ্য আসছে কেন? কারা ফেলছে? কেন ফেলছে? আমি দেখেছি বেশ কিছু খালে এতো কঠিন বর্জ্য জমেছে তার ওপর দিয়ে মানুষ হাঁটছে। খালের মুখে জাল বসানো হচ্ছে সনাতন পদ্ধতি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পাইলট প্রকল্প নিতে পারে। তাহলে অনেক বিষয় জানা যাবে, অভিজ্ঞতা হবে। এক্ষেত্রেও সাফল্যের জন্য সততা ও একনিষ্টতা থাকতে হবে। পাশাপাশি বর্জ্য ঠেকাতে যথাযথ উদ্যোগ, কঠোর পদক্ষেপও চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বন্দর দিবসের মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কর্ণফুলী নদী মানেই তো চট্টগ্রাম বন্দর। কর্ণফুলী আমাদের হৃদয় (হার্ট)। এত ভাগ্যবান যে আমরা, এত চমৎকার একটি নদী বাংলাদেশে রয়েছে। এ নদীর ওপরই আমাদের ঐতিহাসিক এ বন্দর। সেই নদী সত্যিই আমাদের মায়ের মতো। মাকে যেমন আমরা অন্তর দিয়ে ভালোবাসি তেমনি কর্ণফুলী নদী সেই রকম। এ নদী রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দর সবসময় খুবই সচেতন। পোর্ট লিমিটের অংশে সারা বছর নাব্য রক্ষায় খনন করি, বর্জ্য অপসারণ নিয়মিত করে যাচ্ছি। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করি আমরা। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলেই। যাতে এপাড় ওপাড় দখল, অবৈধ স্থাপনা, পরিবেশ দূষণ করতে না পারে। আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরের বর্জ্য খাল দিয়ে নদীতে এসে পড়ে। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, অনেক আন্দোলন হয়েছে। এখন বন্দরের পক্ষ থেকে নেটিং নিজেরাই করে দেবো চিন্তা করছি। যত খাল আছে, সব খালের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নেটিং করে দেবে। ঠিকাদার করলো কি করলো না, অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করলো কি করলো না সেটি আমরা দেখতে যাবো না। যাতে এ খালগুলো দিয়ে কোনো বর্জ্য না পড়ে তার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে আমাদের অর্থ ব্যবহার করে নেটিং করে দেব। এককভাবে কারও পক্ষে নদী রক্ষা সম্ভব নয়। সবাই নদীকে ভালোবাসতে হবে। নদীকে বুকে ধারণ করে সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ইনশাআল্লাহ সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজের কাছে জানতে চাইলে বলেন, বন্দর চেয়ারম্যান স্যার নির্দেশ দিয়েছেন খালের মুখে নেটিংয়ের উদ্যোগ নিতে। আমরা এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা নিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি খালের মুখে নেটিং করে কঠিন বর্জ্য নদীতে পড়া বন্ধ করাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। কোন ধরনের নেট আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশের সঙ্গে উপযোগী হবে সে ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- নেটে আটকে যাওয়া কঠিন বর্জ্য দ্রুত অপসারণের রূপরেখা তৈরি। পাশাপাশি আমাদের যে নিয়মিত নদীশাসন ও নদী খনন- সেটি অব্যাহত থাকবে।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কর্ণফুলীতে বর্জ্য পড়া ঠেকাতে খালের মুখে বসবে জাল

Update Time : 09:11:18 am, Thursday, 9 May 2024
২৫
মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরোচীফ
চট্টগ্রাম: নগরের স্যুয়ারেজ, গৃহস্থালি, শিল্প-কারখানাসহ সব খাতের কঠিন বর্জ্য খাল বেয়ে সোজা পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। ফলে একদিকে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে নদীর তলদেশ, পাড় ভরাট হয়ে প্রশস্ততা কমছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে খালগুলোর মুখে নেটিং করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটি হলে নদী সুরক্ষায় জাদুকরী প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, ককসিট, প্লাস্টিক বোতল, কৌটা, পলিথিনসহ বিচিত্র সব বর্জ্যের ছড়াছড়ি। নৌযান থেকে বের হওয়া বেশ পোড়াতেল ভাসছে।
দিনের দুইবার করে জোয়ার-ভাটা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়মিত খনন, নদীশাসনের কারণে কর্ণফুলী মারা না গেলেও ক্রমাগত দখলে দূষণে বিপর্যস্ত, মুমূর্ষু অবস্থা।
কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা মো. লোকমান  বলেন, কর্ণফুলী শুধু একটি নদী নয়।
এ নদীর উজানে হালদা নদী। চট্টগ্রাম ওয়াসা হালদা ও কর্ণফুলীর পানি সরবরাহ করে শহরের অর্ধকোটি মানুষের বাসাবাড়িতে। অপচনশীল কঠিন বর্জ্য, অপ্রতিরোধ্য গতির দখল, ভয়াবহ দূষণে নদী ভরাট হলে জোয়ারে লবণাক্ত পানি উজানে চলে যাবে। তখন যে কী হবে তার নমুনা সম্প্রতি নগরবাসী দেখেছেন। এ নদীর দুই পাড়ে যে লাখো মানুষের বসবাস, জীবিকা তাদের কী হবে! নদীই যদি না বাঁচে তাহলে বন্দর বাঁচবে? আমরা বাঁচবো? তাই যেকোনো মূল্যে প্রাকৃতিক সম্পদ কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে। শুনেছি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ খালের মুখে নেটিং করে দেবে। এটি হলে কঠিন বর্জ্য নদীতে পড়বে না, খালেই আটকে যাবে।
কর্ণফুলী নদী গবেষক অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খালের মুখে জাল বসালে নিঃসন্দেহে বর্জ্য আটকাবে। কোন ধরনের জাল, জালের ছিদ্রের আকার কেমন হবে? সেই বর্জ্য অপসারণ করবে কারা, কীভাবে? সত্যি কথা হচ্ছে দেহের ক্যান্সার সেল যেমন সব উপড়ে ফেলতে হয় তেমনি নদী বাঁচাতে দূষণের সব পথ বন্ধ করে দিতে হবে। খাল দিয়ে কঠিন বর্জ্য আসছে কেন? কারা ফেলছে? কেন ফেলছে? আমি দেখেছি বেশ কিছু খালে এতো কঠিন বর্জ্য জমেছে তার ওপর দিয়ে মানুষ হাঁটছে। খালের মুখে জাল বসানো হচ্ছে সনাতন পদ্ধতি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পাইলট প্রকল্প নিতে পারে। তাহলে অনেক বিষয় জানা যাবে, অভিজ্ঞতা হবে। এক্ষেত্রেও সাফল্যের জন্য সততা ও একনিষ্টতা থাকতে হবে। পাশাপাশি বর্জ্য ঠেকাতে যথাযথ উদ্যোগ, কঠোর পদক্ষেপও চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বন্দর দিবসের মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কর্ণফুলী নদী মানেই তো চট্টগ্রাম বন্দর। কর্ণফুলী আমাদের হৃদয় (হার্ট)। এত ভাগ্যবান যে আমরা, এত চমৎকার একটি নদী বাংলাদেশে রয়েছে। এ নদীর ওপরই আমাদের ঐতিহাসিক এ বন্দর। সেই নদী সত্যিই আমাদের মায়ের মতো। মাকে যেমন আমরা অন্তর দিয়ে ভালোবাসি তেমনি কর্ণফুলী নদী সেই রকম। এ নদী রক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দর সবসময় খুবই সচেতন। পোর্ট লিমিটের অংশে সারা বছর নাব্য রক্ষায় খনন করি, বর্জ্য অপসারণ নিয়মিত করে যাচ্ছি। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করি আমরা। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলেই। যাতে এপাড় ওপাড় দখল, অবৈধ স্থাপনা, পরিবেশ দূষণ করতে না পারে। আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরের বর্জ্য খাল দিয়ে নদীতে এসে পড়ে। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, অনেক আন্দোলন হয়েছে। এখন বন্দরের পক্ষ থেকে নেটিং নিজেরাই করে দেবো চিন্তা করছি। যত খাল আছে, সব খালের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নেটিং করে দেবে। ঠিকাদার করলো কি করলো না, অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ করলো কি করলো না সেটি আমরা দেখতে যাবো না। যাতে এ খালগুলো দিয়ে কোনো বর্জ্য না পড়ে তার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে আমাদের অর্থ ব্যবহার করে নেটিং করে দেব। এককভাবে কারও পক্ষে নদী রক্ষা সম্ভব নয়। সবাই নদীকে ভালোবাসতে হবে। নদীকে বুকে ধারণ করে সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ইনশাআল্লাহ সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজের কাছে জানতে চাইলে বলেন, বন্দর চেয়ারম্যান স্যার নির্দেশ দিয়েছেন খালের মুখে নেটিংয়ের উদ্যোগ নিতে। আমরা এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা নিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি খালের মুখে নেটিং করে কঠিন বর্জ্য নদীতে পড়া বন্ধ করাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। কোন ধরনের নেট আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশের সঙ্গে উপযোগী হবে সে ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- নেটে আটকে যাওয়া কঠিন বর্জ্য দ্রুত অপসারণের রূপরেখা তৈরি। পাশাপাশি আমাদের যে নিয়মিত নদীশাসন ও নদী খনন- সেটি অব্যাহত থাকবে।