Dhaka 8:29 am, Monday, 8 December 2025

রাজশাহীর বাঘায় ফাতেমা জাতের ধান চাষ।

Reporter Name
  • Update Time : 12:13:32 pm, Monday, 23 May 2022
  • / 722 Time View
৬৫

রাজশাহীর বাঘায় ফাতেমা জাতের ধান চাষ।

আবুল হাশেম
রাজশাহী থেকেঃ

রাজশাহীর বাঘায় এবার প্রথমবারের মতো ‘ফাতেমা’ জাতের ধান চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন কৃষক। ধান কাটার পর ফলনে আশার সঞ্চার সৃষ্টি করেছে কৃষকদের। বাঘায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাব এ ধান চাষ করে বিঘায় ৩৯-৪২ মণ(কাঁচা) ধান উৎপাদন করেছেন জেলার বাঘা উপজেলার কয়েকজন কৃষক। কৃষি বিভাগ এ ধান চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করলে কৃষক পর্যায়ে সাড়া ফেলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
বাঘায় প্রথম চাষ করা এ জাতের ধানের ফলন প্রতি বিঘায় ৩৯-৪২ মণ(কাঁচা)। বাঘায় ধান চাষী বাঘশায়েস্তার জুয়েল রানা ও আমোদপুরের আঃ সালাম বলেন, তার জমিতে প্রথমবারের মতো ফাতেমা ধান চাষ করেছিলেন এবার। গত রবিবার দুটি জমিতে এ ধান কর্তন করে প্রতি বিঘায় ৩৯- ৪২মণ(কাঁচা) ফলন পেয়েছেন।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে প্রতি বিঘাতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ধানের উৎপাদন হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ মণ। সেখানে একই খরচে প্রতি বিঘা জমিতে ফাতেমা ধান ৩৯-৪২মণ উৎপাদন হচ্ছে। ব্রি-২৮ ধানের চেয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ১৬ মণ ধান বেশি পাওয়া যাচ্ছে।। এ ধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,দেশে বর্তমানে যেসব জাতের ধান চাষ হয় সেসবের চেয়ে এই ধানের ফলন অনেক বেশী।ফাতেমা ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যে কোন জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করলেই তা বেড়ে ৮-১২ টি হয়। প্রতিটি ধানের শিষ ১২-১৫ ইঞ্চির মত লম্বা হয়। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষ করল এ ধানের প্রতি শিষে প্রায় ৫০০-৬০০ টি দানা হয়। গোড়া যথেষ্ট শক্ত, সহজে হেলে পড়ে না। এই ধান ঝড়-বৃষ্টিতে হেলে পড়ার কোন আশঙ্কা নেই। অন্য যে কোন জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম। সকল কুশির ধান একসাথে বের হয় না, নিচের দিকের কুশি পরে বের হয়। ফলে পাকতে ৭-৮ দিন তারতাম্য হয়। নিচের দিকে চিটা বেশি হলেও স্পাইকলেট (দানা) বেশি হওয়ায় ফলন হ্রাস পায় নাই।এ ধান১৫০-১৫৫ দিনে কাটা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা জাতের ধান মূলত হাইব্রিড ধানের সেগ্রিগেটেড লাইন। তাই, এই জাতের ফলনের তারতাম্য হতে পারে এবং উচু নিচু হওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা আছে। যেহেতু এইটি কোন স্বীকৃত জাত নয়, তাই আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করি না। তবে, যেহেতু কৃষকরা নিজ দায়িত্বে ফাতেমা ধানের চাষ করেছিল, কৃষি অফিসের দায়িত্ব মোতাবেক আমরা কৃষকদের সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করি। কৃষকের নিয়মিত পরিচর্যা এবং সঠিক বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করায় ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এই জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তাই, গবেষণা ফলাফল আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা প্রয়োজন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগেরহাটের কৃষক ফাতেমা বেগম প্রথম ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে তার বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ দেখতে পান। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে প্রক্রিয়া করে বীজ হিসেবে রেখে দেন। পরের বছর সেই থেকে ধান চাষ চাষ করে আড়াই কেজি ধান পাওয়া যায়। সময়ের ব্যবধানে এখন এ ধান সাড়া ফেলেছে। পরিচিতি পেয়েছে ফাতেমা ধান হিসেবে।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন ফাতেমা জাতের ধানের রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। এ ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা যেতে পারে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

রাজশাহীর বাঘায় ফাতেমা জাতের ধান চাষ।

Update Time : 12:13:32 pm, Monday, 23 May 2022
৬৫

রাজশাহীর বাঘায় ফাতেমা জাতের ধান চাষ।

আবুল হাশেম
রাজশাহী থেকেঃ

রাজশাহীর বাঘায় এবার প্রথমবারের মতো ‘ফাতেমা’ জাতের ধান চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন কৃষক। ধান কাটার পর ফলনে আশার সঞ্চার সৃষ্টি করেছে কৃষকদের। বাঘায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাব এ ধান চাষ করে বিঘায় ৩৯-৪২ মণ(কাঁচা) ধান উৎপাদন করেছেন জেলার বাঘা উপজেলার কয়েকজন কৃষক। কৃষি বিভাগ এ ধান চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করলে কৃষক পর্যায়ে সাড়া ফেলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
বাঘায় প্রথম চাষ করা এ জাতের ধানের ফলন প্রতি বিঘায় ৩৯-৪২ মণ(কাঁচা)। বাঘায় ধান চাষী বাঘশায়েস্তার জুয়েল রানা ও আমোদপুরের আঃ সালাম বলেন, তার জমিতে প্রথমবারের মতো ফাতেমা ধান চাষ করেছিলেন এবার। গত রবিবার দুটি জমিতে এ ধান কর্তন করে প্রতি বিঘায় ৩৯- ৪২মণ(কাঁচা) ফলন পেয়েছেন।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে প্রতি বিঘাতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ধানের উৎপাদন হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ মণ। সেখানে একই খরচে প্রতি বিঘা জমিতে ফাতেমা ধান ৩৯-৪২মণ উৎপাদন হচ্ছে। ব্রি-২৮ ধানের চেয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ১৬ মণ ধান বেশি পাওয়া যাচ্ছে।। এ ধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,দেশে বর্তমানে যেসব জাতের ধান চাষ হয় সেসবের চেয়ে এই ধানের ফলন অনেক বেশী।ফাতেমা ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যে কোন জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করলেই তা বেড়ে ৮-১২ টি হয়। প্রতিটি ধানের শিষ ১২-১৫ ইঞ্চির মত লম্বা হয়। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষ করল এ ধানের প্রতি শিষে প্রায় ৫০০-৬০০ টি দানা হয়। গোড়া যথেষ্ট শক্ত, সহজে হেলে পড়ে না। এই ধান ঝড়-বৃষ্টিতে হেলে পড়ার কোন আশঙ্কা নেই। অন্য যে কোন জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম। সকল কুশির ধান একসাথে বের হয় না, নিচের দিকের কুশি পরে বের হয়। ফলে পাকতে ৭-৮ দিন তারতাম্য হয়। নিচের দিকে চিটা বেশি হলেও স্পাইকলেট (দানা) বেশি হওয়ায় ফলন হ্রাস পায় নাই।এ ধান১৫০-১৫৫ দিনে কাটা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, ফাতেমা জাতের ধান মূলত হাইব্রিড ধানের সেগ্রিগেটেড লাইন। তাই, এই জাতের ফলনের তারতাম্য হতে পারে এবং উচু নিচু হওয়ায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা আছে। যেহেতু এইটি কোন স্বীকৃত জাত নয়, তাই আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করি না। তবে, যেহেতু কৃষকরা নিজ দায়িত্বে ফাতেমা ধানের চাষ করেছিল, কৃষি অফিসের দায়িত্ব মোতাবেক আমরা কৃষকদের সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করি। কৃষকের নিয়মিত পরিচর্যা এবং সঠিক বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করায় ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এই জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তাই, গবেষণা ফলাফল আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা প্রয়োজন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগেরহাটের কৃষক ফাতেমা বেগম প্রথম ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে তার বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ দেখতে পান। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে প্রক্রিয়া করে বীজ হিসেবে রেখে দেন। পরের বছর সেই থেকে ধান চাষ চাষ করে আড়াই কেজি ধান পাওয়া যায়। সময়ের ব্যবধানে এখন এ ধান সাড়া ফেলেছে। পরিচিতি পেয়েছে ফাতেমা ধান হিসেবে।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন ফাতেমা জাতের ধানের রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। এ ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা যেতে পারে।