Dhaka 9:17 pm, Sunday, 7 December 2025

 আনোয়ারার গন মানুষের ভোগান্তি  ও জনদুর্ভোগ কমবে ২৪ কোটি টাকার প্রকল্প 

Reporter Name
  • Update Time : 03:19:15 pm, Thursday, 11 July 2024
  • / 273 Time View
২২
মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরো
আনোয়ারায় সাগর ও নদীর জোয়ারে প্লাবিত উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষায় ৩ প্রকল্পে আশার আলো দেখাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদীর জোয়ারের দুর্গতি লাগবে বাঘখাইনে বসছে ৬ গেটের উভয়মুখী আধুনিক স্লুইচগেট। গহিরা ও সরেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে ১৫শ’ ফুট অংশে জিও টিউব ও জিও ব্যাগের মাধ্যমে আপদকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে লাখো মানুষের ভোগান্তি ঘুচবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর শাখা শিকলবাহা খালের বাঘখাইনের স্লুইস গেট বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে বাঘখাইন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। চাতরী, পরৈকোড়া, আনোয়ারা সদর, বারখাইন ইউনিয়নসহ ৪ ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের কয়েক হাজার একর জমির চাষাবাদ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ইতোপূর্বে বাঘখাইন এলাকার খালে নির্মিত স্লুইচ গেটটি নির্মাণের কিছুদিন পরেই পানির তোড়ে তলিয়ে গিয়ে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে খাল সৃষ্টি হয়ে যায়। ফলে জোয়ারের পানিতে বিশাল এলাকায় জলাবদ্ধতা ছাড়াও চলাচলের মূল বেড়িবাঁধ তলিয়ে যাওয়ায় এই এলাকায় নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। বর্তমান কয়েক হাজার একর ফসলি জমিতে জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। তাই জনদুর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬ দরজার আধুনিক একটি স্লুইচ গেট করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আগের স্লুইচ গেটটি ৩ দরজা বিশিষ্ট ও শুধু নদীর দিক থেকে শাখা খালে পানি প্রবাহের সুযোগ ছিল। নতুন গেট নির্মিত হলে উভয় দিকে পানি চলাচলের সুযোগ থাকবে। এর ফলে রক্ষা হবে মাছের অভয়ারণ্য। স্থানীয় বেশ কিছু মৎস্যজীবী থাকায় পানি চলাচলের মাধ্যমে মাছের অভয়ারণ্য ঠিক রেখে এই গেটটি নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, নতুন স্লুইচ গেটের ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর আগামী শুষ্ক মৌসুমে (অক্টোবর–নভেম্বর) স্লুইচ গেটের কাজ শুরু হবে। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্লুইচ গেট না থাকায় জোয়ারের তোড়ে বেধিবাঁধ ভেঙে খাল সৃষ্টি হয়ে বাঘখাইনের গ্রাম বিচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাছাড়া ৩ ইউনিয়নের অন্তত ৫ গ্রাম জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এতে এলাকার অসুস্থ রোগী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির শেষ নেই।
একইভাবে বর্ষায় ঝুঁকি কমাতে গহিরা বাইঘ্যার ঘাট ও সরেঙ্গা এলাকার জন্য আপদকালীন দুটি প্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আনোয়ারায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৩৬৪ কোটি একটি বড় প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে। তার আগে বর্ষা সমাগত হওয়ায় বাইঘ্যার ঘাট এলাকায় টিউব ও সরেঙ্গা এলাকায় জিও ব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাইঘ্যার ঘাটের ভাঙন কবলিত প্রায় ৩২০ ফুট অংশে বসানো হচ্ছে জিও টিউব। এই প্রকল্পে বানানো হবে প্রায় ২৫ ফুট দীর্ঘ ৬৫টি টিউব। ব্যয় হবে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো সূত্র।
তবে সরেঙ্গা অংশে জিও ব্যাগ প্রকল্পের কাজ দেখেশুনে শুরু করতে চায় পাউবো। এখানে কাজ হবে প্রায় ১১শ’ ফুট। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেও প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হযনি। বর্ষায় ভাঙন বেড়ে গেলে দ্রুততার সাথে এখানে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হবে বলে জানা গেছে। সরেংগা এলাকায় চলমান জিও টিউব প্রকল্পের কাজে ধীরগতি উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, একেবারে কচ্ছপ গতিতে কাজ চলছে। যে গতিতে কাজ হচ্ছে তাতে কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে আবারও বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তিনি কাজ দ্রুত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শহীদ দৈনিক অগ্নিশিখা কে  জানান, বাঘখাইনে তলিয়ে যাওযা স্লুইচ গেটের স্থানে নতুন আধুনিক মানের স্লুইচ গেট নির্মাণ প্রকল্পের ডিজাইন হয়ে গেছে। এখন বর্ষাকাল হওয়ায় সেখানে নতুন করে কিছু করা যাচ্ছে না। দুই এক মাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার শেষ করে আগামী চার মাসের মধ্যে কাজ শুরু করার প্রত্যাশা রয়েছে। অপর দুটির মধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। অপর প্রকল্পটি প্রয়োজন বিবেচনায় দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে বৈঠক করে ৩ প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতি নিশ্চিত হয়েছি। বাঘখাইন স্লুইচ গেটের কারণে চাতরীসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমি নিজে গিয়ে তাদের দুর্দশা দেখে এসেছি। ভরা বর্ষায় গহিরা, সরেঙ্গায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ বিপদের কারণ হতে পারে। স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ শুরুর আগে আপদকালীন সময়ের জন্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

 আনোয়ারার গন মানুষের ভোগান্তি  ও জনদুর্ভোগ কমবে ২৪ কোটি টাকার প্রকল্প 

Update Time : 03:19:15 pm, Thursday, 11 July 2024
২২
মাসুদ পারভেজ বিভাগীয় ব্যুরো
আনোয়ারায় সাগর ও নদীর জোয়ারে প্লাবিত উপকূলীয় মানুষের সুরক্ষায় ৩ প্রকল্পে আশার আলো দেখাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদীর জোয়ারের দুর্গতি লাগবে বাঘখাইনে বসছে ৬ গেটের উভয়মুখী আধুনিক স্লুইচগেট। গহিরা ও সরেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে ১৫শ’ ফুট অংশে জিও টিউব ও জিও ব্যাগের মাধ্যমে আপদকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে লাখো মানুষের ভোগান্তি ঘুচবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কর্ণফুলী নদীর শাখা শিকলবাহা খালের বাঘখাইনের স্লুইস গেট বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে বাঘখাইন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। চাতরী, পরৈকোড়া, আনোয়ারা সদর, বারখাইন ইউনিয়নসহ ৪ ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের কয়েক হাজার একর জমির চাষাবাদ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ইতোপূর্বে বাঘখাইন এলাকার খালে নির্মিত স্লুইচ গেটটি নির্মাণের কিছুদিন পরেই পানির তোড়ে তলিয়ে গিয়ে বেঁড়িবাঁধ ভেঙে খাল সৃষ্টি হয়ে যায়। ফলে জোয়ারের পানিতে বিশাল এলাকায় জলাবদ্ধতা ছাড়াও চলাচলের মূল বেড়িবাঁধ তলিয়ে যাওয়ায় এই এলাকায় নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যায় না। বর্তমান কয়েক হাজার একর ফসলি জমিতে জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। তাই জনদুর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬ দরজার আধুনিক একটি স্লুইচ গেট করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আগের স্লুইচ গেটটি ৩ দরজা বিশিষ্ট ও শুধু নদীর দিক থেকে শাখা খালে পানি প্রবাহের সুযোগ ছিল। নতুন গেট নির্মিত হলে উভয় দিকে পানি চলাচলের সুযোগ থাকবে। এর ফলে রক্ষা হবে মাছের অভয়ারণ্য। স্থানীয় বেশ কিছু মৎস্যজীবী থাকায় পানি চলাচলের মাধ্যমে মাছের অভয়ারণ্য ঠিক রেখে এই গেটটি নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, নতুন স্লুইচ গেটের ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর আগামী শুষ্ক মৌসুমে (অক্টোবর–নভেম্বর) স্লুইচ গেটের কাজ শুরু হবে। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্লুইচ গেট না থাকায় জোয়ারের তোড়ে বেধিবাঁধ ভেঙে খাল সৃষ্টি হয়ে বাঘখাইনের গ্রাম বিচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাছাড়া ৩ ইউনিয়নের অন্তত ৫ গ্রাম জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এতে এলাকার অসুস্থ রোগী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির শেষ নেই।
একইভাবে বর্ষায় ঝুঁকি কমাতে গহিরা বাইঘ্যার ঘাট ও সরেঙ্গা এলাকার জন্য আপদকালীন দুটি প্রকল্প নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আনোয়ারায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৩৬৪ কোটি একটি বড় প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে। তার আগে বর্ষা সমাগত হওয়ায় বাইঘ্যার ঘাট এলাকায় টিউব ও সরেঙ্গা এলাকায় জিও ব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাইঘ্যার ঘাটের ভাঙন কবলিত প্রায় ৩২০ ফুট অংশে বসানো হচ্ছে জিও টিউব। এই প্রকল্পে বানানো হবে প্রায় ২৫ ফুট দীর্ঘ ৬৫টি টিউব। ব্যয় হবে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো সূত্র।
তবে সরেঙ্গা অংশে জিও ব্যাগ প্রকল্পের কাজ দেখেশুনে শুরু করতে চায় পাউবো। এখানে কাজ হবে প্রায় ১১শ’ ফুট। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেও প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হযনি। বর্ষায় ভাঙন বেড়ে গেলে দ্রুততার সাথে এখানে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হবে বলে জানা গেছে। সরেংগা এলাকায় চলমান জিও টিউব প্রকল্পের কাজে ধীরগতি উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, একেবারে কচ্ছপ গতিতে কাজ চলছে। যে গতিতে কাজ হচ্ছে তাতে কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে আবারও বড় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তিনি কাজ দ্রুত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শহীদ দৈনিক অগ্নিশিখা কে  জানান, বাঘখাইনে তলিয়ে যাওযা স্লুইচ গেটের স্থানে নতুন আধুনিক মানের স্লুইচ গেট নির্মাণ প্রকল্পের ডিজাইন হয়ে গেছে। এখন বর্ষাকাল হওয়ায় সেখানে নতুন করে কিছু করা যাচ্ছে না। দুই এক মাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার শেষ করে আগামী চার মাসের মধ্যে কাজ শুরু করার প্রত্যাশা রয়েছে। অপর দুটির মধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। অপর প্রকল্পটি প্রয়োজন বিবেচনায় দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে বৈঠক করে ৩ প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতি নিশ্চিত হয়েছি। বাঘখাইন স্লুইচ গেটের কারণে চাতরীসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমি নিজে গিয়ে তাদের দুর্দশা দেখে এসেছি। ভরা বর্ষায় গহিরা, সরেঙ্গায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ বিপদের কারণ হতে পারে। স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ শুরুর আগে আপদকালীন সময়ের জন্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।